আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩০ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

আগ্রহ বাড়ছে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ রঙিন ফুলকপি চাষ

শাহ আলম নূর : দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হচ্ছে রঙিন ফুলকপি। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ। পুষ্টিগুণ সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেশি। ফলন ও মুনাফা ভালো হওয়ায় চাষীদের মধ্যেও বাড়ছে আগ্রহ। রঙিন ফুলকপি চাষের সম্ভাবনা দেখছে কৃষিবিভাগ।
মাঠজুড়ে বাহারী ফুলকপি। কোথাও বেগুনী, কোথাওবা হলুদ। আছে লাল-সবুজের শোভাও। নানা রঙের ফুলকপি চাষ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ক্রেতাদের নজর কাড়ছে; চাষীরাও পাচ্ছেন দাম।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে এবং চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে ছলিমপুরে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপির চাষ করেছেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও লাইলী বেগম। গতানুগতিক সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এ সফলতা এসেছে। সখীপুরে রঙিন ফুলকপি চাষের বিষয়টি নতুন হওয়ায় আশপাশের অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন লাইলীর খেত দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। লাইলী উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের শ্রীপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মমিনুলের স্ত্রী।
ছলিমপুরের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “খুচরা-পাইকারীতে বিক্রি বেড়েছে, একটা ১শ’ টাকা বললেও কিনছে ক্রেতা।” রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতা পেয়েছেন মাগুরার হাজরাতলা গ্রামের কৃষক সুশেন বালাও। তাঁর বিশ শতক জমিতে যেন রঙয়ের মেলা বসেছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আগেই রঙিন ফুলকপি চাষ শুরু হয়েছে। তবে টাঙ্গাইলে এবারই প্রথম চাষ হচ্ছে। ভারত থেকে আনা এই ফুলকপির বীজ থেকে উৎপন্ন ৪০০ চারা ভূঞাপুর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের সবজি চাষি আরশেদ আলীর ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়। চারা ছাড়াও ফুলকপি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব সার, কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চারা রোপণের পর থেকে আড়াই মাসের (৮০ দিনের) মধ্যে জমি থেকে ফসল তোলা যাচ্ছে। এই ফুলকপি চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে না।
কৃষক আরশেদ আলী বলেন, ‘নিজ বাড়ির আঙিনার এক বিঘা জমিতে প্রতি বছর নানান সবজি চাষ করি। এবার স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমির অর্ধেকাংশে পরীক্ষামূলকভাবে হলুদ ও গোলাপি রঙের ফুলকপি চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি।’
‘এলাকার মানুষ আগ্রহী হয়ে ভালো দাম দিয়ে খেত থেকেই এই ফুলকপি কিনে নিচ্ছেন। বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এসব রঙিন ফুলকপি। মাঝারি আকৃতির একেকটি ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
ভালো ফলন ও সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় উৎসাহী হয়ে আগামী মৌসুমে পুরো জমিতেই এই রঙিন ফুলকপি চাষ করার আশা করছেন আরশেদ আলী। এ দিকে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষে আরশেদ আলীর সাফল্য স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।তার এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক মানুষ। তাদের কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।
একই গ্রামের আরেক কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আরশেদ আলীর রঙিন ফুলকপি দেখেছি। এর চাষপদ্ধতি সম্পর্কে তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়েছি। আগামীতে আমিও এই রঙিন ফুলকপি চাষ করব আশা করছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘স্বাদ কেমন তা দেখতে জমি থেকেই ৫০ টাকা দিয়ে একটি হলুদ রঙের ফুলকপি কিনেছি।’ ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানোর প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলে এই প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে কেউ আগ্রহ দেখাননি। পরে কৃষক আরশেদ আলী আগ্রহ দেখালে তাকে কৃষি অফিস থেকে ফুলকপির চারা, জৈব সার, কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।’
‘এটি স্থানীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষে কতটা উপযোগী বা কেমন ফলন হয় আমরা দেখতে চেয়েছি। আমরা সফল হয়েছি,’ বলেন তিনি। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়া ও চীনসহ অন্যান্য দেশে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর।
তার মতে, সাধারণ ফুলকপি চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ হয়। খরচ ও পরিশ্রম একই। শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়। মাগুরা কৃষক সুশেন বালা বলেন, “এতো সুন্দর কালার হয়েছে যে পার্শ্ববর্তী গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও আমার ক্ষেত দেখতে লোকজন আসছে।” সুশেনের সাফল্য দেখে রঙিন কপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন আশেপাশের কৃষকরাও।
নেত্রকোনার বারহাট্টার বেশকজন কৃষক চাষ করেছেন বাহারি ফুলকপি। সবুজ, হলুদ ও বেগুনি রঙের কপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষীরা। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। চাষীরা জানান, উৎপাদন করে এলাকায় সুনাম অর্জন করেছি এবং বাজারমূল্যও ভালো পাচ্ছি। বর্তমানে বাজারে প্রতিপিস কফি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে বৈচিত্র আনার পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষিবিভাগ। চট্টগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “পুষ্টির ভান্ডার হয় যে সবজিগুলো এর মধ্যে কোনটায় ভিটামিন-এ আছে কোনটায় ভিটামিন-বি আবার কোনটায় ভিটামিন-সি আছে।”
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “এবছর বিভিন্ন কৃষক দ্বারা ৫০ শতক জমিতে আবাদ করেছি। দিন দিন এটা জনপ্রিয় হচ্ছে এবং বাজার মূল্যও ভালো।” অ্যান্থোসায়ানিন থেকে রঙিন হয়ে ওঠে ফুলকপি। এটি মস্তিস্কের জন্য খুবই ভালো। সাধারণ ফুলকপির তুলনায় পঁচিশ শতাংশের বেশি বিটা ক্যারেটিন রয়েছে, যা ত্বক ও চোখ ভালো রাখে।
সীতাকুণ্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুপর্ণা বড়ুয়া বলেন, “চোখের দৃষ্টি শক্তি, ফুল থেকে রক্ষা আর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।” এছাড়া রঙিন ফুলকপিতে রয়েছে নানা ভিটামিন ও মিনারেল। পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায় রঙিন ফুলকপি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.