আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩১ জানুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানি বিনিয়োগ করবে ৭.৫ হাজার কোটি টাকা

শাহ আলম নূর : স্থানীয় ও বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিকূলতার সময়েই– ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-তে নিবন্ধিত প্রায় তিন ডজন কোম্পানি তাদের ২০২২ সালে ঘোষিত সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
চাহিদা ও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলেও, কোম্পানিগুলোর পদক্ষেপে স্পষ্ট যে তারা পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা থেকে পিছু হটবে না। এসব প্রতিষ্ঠান মোট সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ১০৪ শতাংশ বেশি বলে ডিএসই’র তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এতথ্য জানা যায়।
আগামী কয়েক বছরেই এসব বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যাবে, সেসময় অর্থনৈতিক মন্থর দশাও হয়তো কেটে যাবে এবং চাহিদা বাড়বে। সেই ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখেই প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ আশাবাদী এবং তার জন্য প্রস্ততও থাকতে চাইছে।
এরমধ্যে ৮ কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে প্রত্যেকে ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ করবে। নতুন এসব বিনিয়োগে আরও কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ উদ্যোগ- আরএকে সিরামিকস (বিডি) লিমিটেড। ভবিষ্যতের বাড়তি বাজার চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে টাইলস ও ফসেট উৎপাদনের নতুন দুটি কারখানা স্থাপনে ৯০২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে তারা।
আরএকে সিরামিকসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাধন কুমার দে বলেন, ‘আমাদের ফসেট প্লান্ট স্থাপনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ এটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারবে বলে আমরা আশা করছি’।
তবে বিশ্বের বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্যাসের উচ্চ দাম এবং সরবরাহে ঘাটতির কারণে তারা টাইলস কারখানা স্থাপনে সতর্কভাবে এগোচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সাধন কুমার বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রজেক্ট প্ল্যান অনুসারে এগোচ্ছি। ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের কার্যক্রম শুরু করার কথা। একইসঙ্গে আমরা বর্তমান পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছি’।
টাইলসের নতুন কারখানায় দেড় হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। দৈনিক উৎপাদিত হবে প্রায় ১৫ হাজার বর্গমিটার প্রিমিয়াম মানের টাইলস।
গতবছর আরএকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায়, নতুন কারখানা থেকে বার্ষিক গড়ে ৯৩ কোটি টাকা মুনাফা হবে।
বহুজাতিক আরেকটি কোম্পানি- বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ৪০ একর জমিতে কারখানা স্থাপন করছে। এজন্য তারা বিনিয়োগ করছে ৪৮০ কোটি টাকা। বাজারে তাদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতেই এ উদ্যোগ, বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার দখল প্রায় ৫০ শতাংশ।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রুপালী হক চৌধুরী জানান, পরিকল্পনা অনুসারে, নতুন কারখানার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ এটি চালু হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
এ কারখানায় ডেকোরেটিভ পেইন্ট, শিল্পকাজে ব্যবহৃত রঙ, মেরিন কোটিং, উড কোটিং, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কেমিক্যাল, অ্যাডহেসিভ ও অটোমোটিভ পেইন্ট উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে এসব পণ্যের উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
দেশে নির্মাণ উপকরণ হিসেবে টাইলসের চাহিদা বাড়ছে। এজন্য গাজীপুরে টাইলস কারখানা স্থাপনে ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিক।
কোম্পানি সচিব এ. হালিম ঠাকুর বলেন, ‘একটি গ্রিনফিল্ড কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ হাজার বর্গফুট বাড়াতে চায় ফু-ওয়াং সিরামিক’।
‘আমরা এজন্য বর্তমান কারখানার আশেপাশে আরও জমি কিনব এবং তিনটি প্রোডাকশন লাইনের ইউনিট স্থাপন করব’।
২০২২ সালে সিম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান- মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস ৯০ টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় ধাপের এ উদ্যোগের আওতায় নতুন যন্ত্রপাতিসহ কারখানা প্রাঙ্গনে একটি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে উচ্চ মানের সুতা উৎপাদন করবে, যা এখন আমদানি করা হয়।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস- এর কোম্পানি সচিব হ্যারিস আলম বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় উৎপাদন শুরু হবে বলে আমরা ধারণা করছি। এটা কোম্পানির মোট আয়ের সাথে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করবে’।
তিনি বলেন, দেশে উচ্চ মানের সুতার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, এর বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ‘তাই আমরা দেশেই এগুলো উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছি’।
পুঁজিবাজারের প্রধান কোম্পানিগুলোর মধ্যে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ (ব্যাটবিসি) তাদের সাভারের কারখানা সম্প্রসারণে ৫৭৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। ইফাদ করবে ৩০০ কোটি, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ২৫০ কোটি এবং মীর আখতার ২৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া, জ্বালানি সাশ্রয়ী স্পিনিং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণ স্থাপনের জন্য অর্থায়ন ও ক্রয়ের মাধ্যমে টেকসইভাবে বস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে (এডিবির ঋণ নিয়ে) ১১.২ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এনভয় টেক্সটাইলস।
৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনস লিমিটেড এরমধ্যেই তাদের দুটি গ্যাস স্টেশনের কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই আরও পাঁচটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) স্টেশন এবং পাঁচটি মাদার-ডটার সিএনজি স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) দুটি মাদার (বৃহৎ আকৃতির) ক্রুড অয়েল ট্যাংকার কেনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এর আওতায় দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ারও কেনা হবে। এজন্য তারা ২৪২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বিএসসি’র একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এই প্রস্তাব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে, অনুমতি পেলেই বাস্তবায়িত হবে।
কিছু প্রতিষ্ঠান জানায়, স্থানীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে দেরি হতে পারে।
যেমন আরএকে সিরামিকসের সিওও সাধন কুমার দে জানান, সিরামিক তৈরির আবশ্যক জ্বালানি গ্যাস, সাম্প্রতিক সময়ে সরবরাহ কমার সাথে সাথে এর দামও বেড়েছে, এজন্য তারা টাইলস কারখানা স্থাপনে সতর্কভাবে এগোচ্ছেন।
ফু-ওয়াং এর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ডলার সংকট জটিল রূপ নেওয়ায়’ তারা কয়েক ধাপে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ডলার সংকট যদি আরও অসহনীয় রূপ নেয়– তাহলে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির এলজি খুলতে আরও দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বাজারমূল্য প্রভাবিত হয় এমন তথ্যগুলোতে তারা নজর রাখেন। তবে জনবল ও সক্ষমতা ঘাটতির কারণে তারা পুরোপুরি নজরদারি করতে পারেন না।
তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানি যদি তাদের নতুন বিনিয়োগের (ঘোষিত) সময় বদলায় বা অন্য কোনো পরিবর্তন করে, সেটা যদি আমাদের নজরে আসে- তাহলে আমরা তাদের কর্মকর্তাদের ডেকে এর ব্যাখ্যা দিতে বলি’।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.