আজ: শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ইং, ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

ঢাবির পরীক্ষায় মুখ খোলা রাখার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নির্দেশনা সংক্রান্ত নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনে ঢাবি ভিসি, বাংলা বিভাগের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনের বিষয়টি আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পরিচয় শনাক্ত করার জন্য পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখতে নির্দেশনা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটি। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ এই নির্দেশনা না মানায় গত ১১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্দেশনাটি প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকগণ ইতোমধ্যে অবহিত করেছেন। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী এ নির্দেশনা পালনে অনাগ্রহী ভূমিকা পালন করছেন। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে এই নিয়মকে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। একই সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র নির্বিঘ্নে হিজাব-নিকাব পরার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব দাবি জানান তারা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে যা বলা হয়

স্মারকলিপিতে পাঁচ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো-

১. বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল, পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অন্যথায় পরীক্ষার পূর্বে নারী কর্মচারী বা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা কক্ষে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করা

২. দ্রুত সময়ে সব অনুষদের সব বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থা বন্ধে নোটিশ প্রদান,

৩. বিভিন্ন সময়ে শ্রেণিকক্ষ, ভাইবা বোর্ড ও পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা এবং কটূক্তি করে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের আওতায় আনা,

৪. হিজাব ও নিকাব পরিধানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করা এবং

৫. ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে এনে বা ভিন্ন উপায়ে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ।

স্মারকলিপিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের আবেদন, ‘নোটিশে পরিচয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার অজুহাতে সব ধরনের পরীক্ষা ও সংযোগ ক্লাসে বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ নোটিশের ফলে বিভাগের প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে।’

নোটিশের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মুসলিম হিসেবে এ ঘটনায় মারাত্মকভাবে ব্যাথিত হয়েছি এবং এটি ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান এবং আমাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদে আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.