সহনীয় পর্যায়ে ভর্তুকি চান এমসিসিআই সভাপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক : মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, আমরা ব্যবসায়ী হিসেবে সরকারকে অনুরোধ করব আমাদের কি কোনোভাবে সহনীয় প র্যায়ে ভর্তুকি দিয়ে সাহায্য করা যায় কিনা। আমাদের কস্ট অব প্রোডাকশন যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারব।
তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে একটা ঘোষণা এসেছে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে, যদি বিদ্যুতের দাম ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে বেড়ে যায় তাহলে তা সবক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। আমরা এখন পর্যন্ত জানিনা কীভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম প্রতিমাসে সমন্বয় করা হবে।’
শনিবার এমসিসিআই কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘অন্তত এ বছরটা বিদ্যুতে সহনীয় পর্যায়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করে দেয়া যায় কি না তা যদি সরকার ভেবে দেখেন তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারব। যদি বিদ্যুতের দাম ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে বেড়ে যায় তাহলে তা সবক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। আমরা এখন পর্যন্ত জানিনা কীভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম প্রতিমাসে সমন্বয় করা হবে। কোন পদ্ধতিতে এই সমন্বয়টা হবে, তা যদি পরিষ্কার হয় তাহলে আমাদের জন্য পরিকল্পনা করা খুব সুবিধা হবে।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফরেন রিজার্ভ তিনটা সোর্স থেকে আসে। এগুলো হচ্ছে রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। আমদানি যদি আগের মত হতো তাহলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াত। আমাদের সরকার কিছু উদ্যোগ নেয়ায় গত ছয় মাসে ইম্পোর্ট হয়েছে ৩৮.১৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ইম্পোর্ট কমেছে ২.১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের টার্গেট অনুযায়ী এই ইম্পোর্ট ৮০ বিলিয়ন হবে। ইম্পোর্ট যদি কমে যায় আর রিজার্ভ যদি ঠিক থাকে তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরা একটু স্বস্তি পাব। তবে ইম্পোর্ট বিলাসপণ্যে কমতে হবে। কাঁচামালের ইম্পোর্ট কমে গেলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য চিন্তার কারণ হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করতে গেলে প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করা লাগে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তা নেই। ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট লাইসেন্স কিন্তু পাঁচ বছর করা হয়েছে। আমরা চাই আমাদের ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদও পাঁচ বছর করা হোক। কলকারখানার লাইসেন্সের মেয়াদও আমরা পাঁচ বছর চাচ্ছি। লাইসেন্স যদি পাঁচ বছরের জন্য দেয়া হয় তাহলে ইজ অব ডোয়িং বিজনেস অনেকদূর এগিয়ে যাবে।’
ঋণ খেলাপিদের এমসিসিআই আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম বলেন, ‘ঋণ খেলাপিদের এমসিসিআই কখনোই জায়গা দেয় না। খেলাপি ঋণের মওকুফ আমরা দাবি করিনা। সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি কীভাবে খেলাপি ঋণ কমানো যায়।’
তিনি বলেন, রপ্তানি বহুমুখী করণে আমরা কাজ করছি৷ পোশাক শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও কীভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের সামনের সময়ের পৌঁছাতে চাইলে শুধু পোশাক খাতে নির্ভর করে তা সম্ভব হবে না। আমাদের অন্যাব্য খাত যেমন লেদার, প্লাস্টিক, আইটির পাশাপাশি অন্যান্য খাতে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। পোশাক শিল্পের পরেই আমাদের সবচেয়ে বড় ফ্রন্টিয়ার হচ্ছে হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি। বিভিন্ন উন্নত দেশ তারা হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির ওপর জোর দিয়েই আজকের অবস্থায় আসতে পেরেছে।
সাধারণ সম্পাদক বলেন ফারুক আহমেদ বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি সেক্টরের বেতন পাঁচ বছরে একবার রিভিউ করতে হবে। বেতন আলোচনার সময়ে সেই সেক্টরের একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে আলোচনা সাপেক্ষে হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সেটা শ্রম মন্ত্রণালয় প্রকাশ করে৷ গার্মেন্টস সেক্টরের বেতন নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় লেভেলের লোকেরা নজর রাখেন।’
সভাপতি বলেন, ‘এনবিআরের ব্যাপারে যে সমস্যাটা আমরা ফিল করি সেটা ফিল্ড লেভেলে। তারাই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে। আমাদের, এনবিআরের আর সরকারের যেসব চিন্তা তা ফিল্ড লেভেলে গিয়ে বদলে যাচ্ছে। তাই অটোমেশন প্রয়োজন। অটোমেশন হলে এমন অনেক সমস্যায় আমরা উৎরাতে পারব।’
এমসিসিআইয় সভাপতি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। ইউএসএ, চায়না বা ভারতের ব্যবসায়ীরা যেভাবে নীতি সহায়তা পাচ্ছে সে হারে আমরা পাচ্ছি না। বর্তমান সময়টাতে আমরা যেন চলতে পারি সরকার আমাদের ভর্তুকিটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় কি না সেটাই আমাদের দাবি। আমরা সরাসরি ভর্তুকি দেয়া হোক এমন দাবি জানাই না।’