আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ মার্চ ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

বাড়ছে সম্ভাবনা

হোটেল ব্যবসায় বিদেশী নির্ভরতা কমাতে চায় সি পার্ল

শাহ আলম নূর : দেশে হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ছে। এ খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা যেমন আসছে। তেমনি বাড়ছে কর্মসংস্থানও। একই সাথে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এ খাতের অবদান বাড়ছে।
এক দিকে হোটেল ব্যবসা যেমন বাড়ছে। তেমনি এখাতে তৈরী হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। তবে এখন পর্যন্ত দেশে যে সব ফাইভ স্টার বা পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ দেশে হোটেল ব্যবসা পুরোপুরি বিদেশী প্রতিষ্ঠান নির্ভর। তবে
বিদেশী নির্ভরতা কমাতে চায় সি পার্ল।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা বেশ ভাল ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর স্বকৃতি স্বরুপ দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডসে সেরা ৩টি অ্যাওয়ার্ড পেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। সেরা লাক্সারি হোটেলগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পাকে পৃথিবীর সেরা বিচ সাইড লাক্সারি রিসোর্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গ্লোবাল অর্গানাইজেশন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডস’।
রয়েল টিউলিপ হিসেবে পরিচিত দেশের সবচেয়ে বড় এ লাক্সারি রিসোর্টটি সেরা বিচ সাইড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি সেরা লাক্সারি স্পা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। এক সাথে এমন তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার তাদের আত্তবিশ্বাস বাড়িয়েছে বহুগুন।

সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আমিনুল হক শামীম বলেন সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হোটেল ব্যবসার অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। তবে দেশে হোটেল ব্যবসা বলতে গেলে পুরোটাই বিদেশী প্রতিষ্ঠান নির্ভর। অর্থাৎ আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা হোটেল তৈরী করার পর পরিচালনা করতে হচ্ছে বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে। আমরা এ ধারা থেকে বের হয়ে আসতে চাই।
আমাদের দেশে দক্ষ্য মানব সম্পদের অভাব নেই। একটি উদ্যোগের অভাব। এ বিপুল সম্ভাবনার কাজে লাগাতে সি পার্ল নামে আমরা হোটেল ব্যবস্থাপনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি হোটেল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন শুরু করেছে সি পার্ল। এবং বেশ ভালভাবেই দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বলেন হোটেল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সারা দেশে হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের সুযোগ রয়েছে। দেশের মানুষের কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে চায় সি পার্ল।

সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র কোম্পানি সেক্রেটারি আজহারুল মামুন বলেন দেশে হোটেল ব্যবস্থাপন খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ ফাইভ স্টার বা পাঁচ তারকা হোটেল। এক ছাদের নিচে আড়ম্বরপূর্ণ ও বিলাসবহুল জীবনের ছোঁয়া পাওয়া যায় একটি অত্যাধুনিক পাঁচ তারকা হোটেলে। অতিথিদের সেবা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক মানের। এ ধরনের হোটেলে থাকে কফিশপ, কনফারেন্স রুম, হলরুম, বলরুম, কনফেকশনারি, সুইমিং পুল, গলফ কোর্স, টেনিস কোর্ট, স্কুয়া কোর্ট, ডিস্কো, বার, স্পা, শপিং কর্নার, ব্যায়ামাগার, বিশ্বমানের রাঁধুনি, মাল্টি কুইজিন, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুসজ্জিত আবাসন ব্যবস্থা, লন্ড্রি, দ্রুতগতির ইন্টারনেট। কী নেই পাঁচ তারকা হোটেলে!
বিশাল এ কর্মযজ্ঞ পরিচালনার জন্য রয়েছে বেশকিছু বিভাগ। বিভাগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাউজকিপিং, গেস্ট সার্ভিস বা ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ইভেন্ট প্ল্যানিং, রিজার্ভেশন ইত্যাদি। সুন্দরভাবে সব কাজ পরিচালনা করতে বিদেশ নির্ভর হয়ে পড়েছে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। আমরা এমন ধারা থেকে বেড় হয়ে আসতে চাই। সি পার্ল ব্রান্ডে সারা দেশে হোটেল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে চাই।
তিনি বলেন দেশে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে। এই খাতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়ছে, তেমনি জাতীয় আয়ে অবদানও বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে দেখা যায়, গত এক দশকে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ শতাংশের বেশি। সেইসঙ্গে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সম্প্রতি ‘হোটেল ও রেস্টুরেন্ট জরিপ-২০২১’-এর ফলাফল প্রকাশ করেছে বিবিএস। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) হোটেল ও রেস্টুরেস্ট উপখাতের অবদান জানাতে এই জরিপটি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এই খাতে কর্মসংস্থান, মজুরি ও বেতন, পরিচালন ব্যয়, সম্পদসহ বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ২০২১ সালে দেশের মোট হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার। যেখানে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জরিপে ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৫ হাজার। অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে এই খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে ৫৮ শতাংশের বেশি। এবারের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী হোটেল ও রেস্টুরেন্টে নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২০ লাখ ৭২ হাজার। আগের জরিপে ছিল ৯ লাখ ৪ হাজার। অর্থাৎ এই খাতে দ্বিগুণেরও বেশি কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে করোনাকালীন সময়ে দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কী ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি উঠে আসেনি। এ বিষয়ে বিবিএস কর্মকর্তারা জানান, সামগ্রিক অর্থনীতিতে হোটেল-রেস্টুরেন্টের অবদান জানতে জরিপটি করা হয়েছে। আগের প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। করোনার সময় অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে আবার চালু হয়েছে।
বিবিএস কর্মকর্তারা জানান, দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (এনএসও) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যৌথভাবে এই জরিপটি করেছে। মূলত ২০১৩ সালে এ-সংক্রান্ত শুমারির তথ্য এবং ৫০০ নমুনা এলাকায় হালনাগাদকৃত তালিকা ব্যবহার করে ৬ হাজার ৪০৪টি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠান হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, ২০২১ সালে দেশে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত ২০ লাখ ৭২ হাজার ব্যক্তির মধ্যে বেতনভোগী কর্মী ১২ লাখ ৮১ হাজার জন। অবশিষ্ট ৭ লাখ ৯০ হাজার রয়েছেন মালিক, অংশীদার বা অবৈতনিক শ্রমিক। প্রতিটি হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গড়ে ৪ দশমিক ৭৫ জন ব্যক্তি নিয়োজিত রয়েছেন। জরিপে চার ধরনের মালিকানা অনুসরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
২০২১ সালে দেশে বেসরকারি মালিকানাধীন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৫ হাজার, যা আগের জরিপে ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার। এবার সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে ৮৫২টি; যা আগের জরিপে ছিল ৬৩৯টি। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসার প্রসার হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানানা, দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটন বৃদ্ধিও এই খাত সম্প্রসারণে অবদান রাখছে। তাছাড়া ঘরের বাইরে খাবার এবং অনলাইন ভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রেস্টুরেন্টের খাবার। দেশের জিডিপিতে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানের অবদান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই খাতে স্থূল মূল্য সংযোজন ছিল ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এবারের মূল্য সংযোগ পাওয়া গেছে ৩৮ হাজার ৭০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে জিডিপিতে অবদান প্রায় ১৪০ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী দেশে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে হোটেল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৮১টি। ২০০২-০৩ অর্থবছর ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ১০৩টি, ২০০৯-১০ অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪টি, ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি।
জানা যায়,২০১৫ সালে প্রায় ৫০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে উঠা রয়েল টিউলিপ সী পার্ল বিচ রিসোর্টটিতে রয়েছে ৪৯৩টি কক্ষ। যেখানে হিল ভিউ এবং সি ভিউ এই দুই রকম ভিউয়ের মিশ্রণ রয়েছে সুপেরিয়র কক্ষে। পরবর্তিতে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা নামে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। হোটেলটির রয়েছে প্রিমিয়াম সি ভিউ স্যুইটে মিলবে কিচেন, ডাইনিং ও লিভিং এরিয়া। প্যানারমিক সি ভিউ স্টুডিও স্যুইটে মিলবে কিচেন, ডাইনিং, লিভিং এরিয়া ও ব্যালকনি। দুই ধরনের ভিন্ন আয়তনের এক্সিকিউটিভ স্যুইটেও রয়েছে একই ধরনের সুবিধা। ফ্যামিলি স্যুইটে আছে সৈকতমুখী ব্যালকনি, আলাদা লিভিং স্পেস, তিনটি ওয়াশরুম, একটি মাস্টার বেডরুম এবং একটি চিলড্রেনস রুম।
এছাড়াও বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট। বিশাল আয়তনের রাজসিক অন্দরসজ্জা ও ফার্নিচারের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বড় একটি বারান্দা। আর নবদম্পতিদের জন্য রয়েছে লাক্সারি হানিমুন স্যুইট, যেখানে একটি সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছুই রাখা হয়েছে আর সেই সাথে থাকছে জ্যাকুজি এবং সুইমিংপুল। এসব ছাড়াও রয়েল টিউলিপ সী পার্ল বিচ রিসোর্টের প্রতিটি রুমেই রয়েছে মিনিফ্রিজ, টি/কফি মেকার, টিভি, পানির বোতল, শাওয়ার কিউবিকল, ২৪ ঘণ্টার রুম সার্ভিস এবং ফ্রি ওয়াইফাইয়ের সুবিধা।
সী পার্ল বিচ রিসোর্টের অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের বার, কফি শপ, সুইমিং পুল, শিশুগ্রাউন্ড, ওয়াটার পার্ক, টেনিস, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, থ্রিডি মুভি হল, বিলিয়ার্ড, ব্যায়ামাগার এবং স্পা। আর আউটডোর এ্যাকটিভিটির মধ্যে আছে প্যারাসেইলিং, স্নোরকেলিং, ডিপ সি ফিশিং এবং স্পিডবোট রাইড সুবিধা। এছাড়াও সম্মেলন ও উৎসব আয়োজনের জন্য রয়েছে ১০ হাজার বর্গফুট বিস্তৃত জায়গা, দুটি সেমিনার কক্ষ ও একটি বিশাল বলরুম।
সী পার্ল বিচ রিসোর্টের বিশেষ বৈশিষ্ট হল এই রিসোর্টের নিজস্ব সমুদ্র সৈকত রয়েছে। রিসোর্ট থেকে অল্প দূরত্বে রয়েছে পর্যটকদের ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হিমছড়ি ঝর্ণা, দরিয়া নগর ও বার্মিজ মার্কেট। খোলামেলা জায়গা এবং মুক্তমঞ্চ থাকার ফলে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং, গালা নাইট, ফ্যামিলি প্রোগ্রাম, ফ্যাশন শো, সভা, সমাবেশসহ যে কোন ধরনের ইভেন্ট অনায়াসেই আয়োজন করা যায়।
৫০ বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রিসোর্টের ভেতর এবং বাহিরের প্রতিটি নির্মাণেই আভিজাত্য এবং স্বকীয়তা বিশেষভাবে চোখে পড়ে, যা হোটেলে আগত অতিথিদের কাছে রাজকীয় অনুভূতি এনে দেয়।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.