আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

‘উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের বিকল্প নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে আমাদের সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের অন্যতম নায়ক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে না পারলে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে হলে আমাদের গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর তা করতে হলে আমাদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য বড় বড় ট্রলার ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করতে হবে।

সম্প্রতি কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের সিন্দাবাদ এক্সপেরিয়েন্স রিসোর্টে আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ব্লু ট্যুরিজম’ বিষয়ে আবাসিক প্রশিক্ষণে মো. খুরশেদ আলম এ সব কথা বলেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফ‘র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা কাঠের পানসি নৌকা দিয়ে সমুদ্র উপকৃল থেকে মাত্র ২০ মাইল দৃরত্ব পর্যন্ত মাছ ধরি। এর বাইরে আমাদের ২০০ ট্রলার রয়েছে। এই ট্রলারগুলো দিয়ে আরও ২০ মাইল গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা যায়। সব মিলিয়ে উপকূল থেকে মোট ৪০ মাইল পর্যন্ত আমরা মাছ ধরতে পারি। অথচ এই ৪০ মাইলের পরেও আমাদের সাগর রয়েছে ৫৬০ মাইল। এই ৫৬০ মাইলে আজ পর্যন্ত আমরা মাছ ধরার জন্য যেতে পারিনি। সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের কোনো জাহাজ নেই। অথচ গভীর সমুদ্রে বড় বড় মাছগুলো অবস্থান করে। বিশেষ করে ৫০ কেজি থেকে বেশি ওজনের টোনা, ভেটকি এসব মাছ আমরা দেখি না। কারণ এসব গভীর জলের মাছ, গভীর জলে থাকে। সমুদ্রের গভীরে গিয়ে মাছ ধরার সক্ষমতা আমাদের হয়ে এখনও হয়ে ওঠেনি। আমরা এসব মাছ ধরতে পারি না। এতে করে আমরা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে থাইল্যান্ড প্রতি বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করে। ইন্দোনেশিয়া ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করে, বিপরীতে বাংলাদেশের আয় মাত্র ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বা ৪৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশের আয় কম মানে এই নয় যে আমাদের সাগরে মাছ কম। সাগরে প্রচুর মাছ রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ফিশিং ট্রলার ও জাহাজের অভাবে আমরা সমদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে পারছি না।’

খুরশেদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ জাহাজে পণ্য আমদানি ও রফতানি হয় ১২০ বিলিয়ন ডলারের। চার থেকে পাঁচ হাজার জাহাজে করে এসব পণ্য আমদানি রফতানি করা হয়। বাংলাদেশের মালিকানায় রয়েছে মাত্র ৮২টি জাহাজ। আমরা প্রতি বছর ৯ বিলিয়ন ডলার জাহাজ ভাড়া দিই। বিনিয়োগকারীরা ‘শর্টটার্ম’ লাভের জন্যে জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে চান না। জাহাজের ব্যবসায় মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশিদের। বর্তমানে আমরা বিশ্বের মোট মৎস আহরণের মাত্র আড়াই শতাংশ আহরণ করতে পারি। জালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জাহাজ ব্যবসা প্রায় বন্ধের পথে। একটি জাহাজ সমুদ্রে ভাসাতে ১৬টি মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এসব কারণে আমরা সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের একক প্রচেষ্টায় ব্লু ইকোনমি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। গার্মেন্টস খাতে যত সহজে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসছে সমুদ্র সম্পদ আহরণে তা হচ্ছে না। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা লাভ করে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ৮১ শতাংশ। অথচ নদী ভূমির পরিমাণ মাত্র ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু এখনো বাংলাদেশ গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণের সক্ষমতা অর্জন করেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর মধ্যে মাত্র পয়েন্ট ৮৪ শতাংশ জাহাজ বানাই। আর মাছ ধরি আড়াই শতাংশ। তাতেই আমাদের অবস্থান বিশ্বে ৩/৪ নাম্বারে। করপোরেট কালচার না থাকায় আমাদের জাহাজ শিল্পও বসে গেছে। এ সময় আমাদের ১০০টির মতো জাহাজ শিল্প ছিল। বেশিরভাগ বর্তমানে নেই। ট্যুরিজমও আমাদের নেই। বিদেশি জাহাজও আমাদের দেশে আসে না বললেই চলে। বিদেশি জাহাজ আনার একটা সমস্যা রয়েছে তা হলো ১৬টি মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘ট্যুরিজম সারা দুনিয়াতে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু এটি আমরা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। সাগরে পলিথিনম ব্যাগ প্লাস্টিকের বোতাল ফেলা হচ্ছে, তা বন্ধ না করলে আমাদের সমুদ্রের ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের শিপ রিসাইকেল কারখানা রয়েছে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে। জাহাজ কাটার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে প্রথম। সেখানে যেভাবে খোলামেলাভাবে জাহাজ কাটা হয় এভাবে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কাটা হয় না। আমরা সরাসরি জাহাজ কাটি এর সব ময়লা ধুয়ে সাগরে চলে যায়।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.