একদিনের ব্যবধানে আবার দরপতন
পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পরও বেড়েছে বিক্রির চাপ

শাহ আলম নূর : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারিদের আস্থা ফেরাতে আরোপ করা হয়েছে শেয়ার দর পতনের ক্ষেত্রে সীমা (ফ্লোর প্রাইস)। তবে তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। বরং পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পরও বেড়েছে বিক্রির চাপ। এতে একদিনের ব্যবধানে আবার দরপতন।
ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিলে শেয়ারবাজারে পতন বন্ধ হবে, এমন ধারন তাদের (রেগুলেটর)। কিন্তু ভূল, ফ্লোর প্রাইস আরোপের পরদিন সেই একই পতন শেয়ারবাজারে। এই পতন থেকে বাঁচতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা মোটেও ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, শেয়ারবাজারে চাপ দিয়ে ভাল করা যাবে না, স্বাভাবিক গতিতেও আনা সম্ভব না। শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক গতি ফেরাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নতুন কৌশল বের করতে হবে। কারন শেয়ারবাজার একটা নিয়মের মধ্যে চলে। তাকে সেই নিয়মে চলতে দেয়া জরুরী। জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক শেয়ারবাজার আনা সম্ভব না।
সবাই শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক লেনদেন ফিরিয়ে আনতে ফ্লোর প্রাইজ চিরতরে উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিল জানিয়ে তারা বলেন, কিন্তু বিএসইসিকে কোন কথা আমলে না নিয়ে গতকাল শেয়ারবাজারে ফের ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। গতকালই বিএসইসি এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করে। এর আগে ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর একদিনে সর্বোচ্চ এক শতাংশ কমতে পারবে বলেও জানায়।
চলতি বছরের শুরুতে লেনদেন মন্দা ছিল জানিয়ে একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, বছরের শুরুতে সূচকে পতন ছিল। সময়ে পালাক্রমে সামান্য উত্থান হয় সূচক। কিন্তু পরবর্তীতে ফের পতন। একই অবস্থা লেনদেনে। বছরের শুরুর ডিএসইর দেড়শ কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে ৪শ কোটি টাকায় এসেছে। কিন্তু এই সময়ের মাঝে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।
এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন ৩ দশমিক ২৯ গুন বেশি হয়েছে। ফলে বাড়ে শেয়ার বিক্রয়ের চাপ। এই চাপের কারনে বেড়েছে লেনদেন পরিমাণ। সূচক পতনের একই অবস্থা অপর শেয়ারবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। কমেছে লেনদেন। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন ১ দশমিক ৪১ গুন বেশি হয়েছে।
তথ্যে দেখা যায় গতকাল ডিএসইতে ৫৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৫১ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৩১ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৫ দশমিক ৮১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৪ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২১৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৫৫ দশমিক ১৬ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৪টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৩১টি এবং কমেছে ১০২টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২০১টির। এদিন ডিএসইতে রুপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন রুপালী ইন্স্যুরেন্স ৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা, এডিএন টেলিকম ২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বিডি কম ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আরডি ফুড ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিং ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অপরদিকে, অপর শেয়ারবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস সোমবার ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২৭টি, কমেছে ৩৮টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৮৩টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৯০ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ৮০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৬ দশমিক ৬০ পয়েন্ট এবং সিএসআই দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২১ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৩০ দশমিক ২২ পয়েন্টে, ১১ হাজার ২৩ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৫৬ দশমিক ৭২ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন প্রিমিয়ার ব্যাংক ৯২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমান কর্টন ৬৭ লাখ টাকা, বেঙ্গল ইউন্ডসর ৫৩ লাখ টাকা, রুপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫১ লাখ টাকা, বিডি কম ৩০ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ৩০ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ২৭ লাখ টাকা, শাইনপুকুর ২৬ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ২৬ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।