আজ: বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ইং, ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৫ মার্চ ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

আর্জেন্টিনায় মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ শতাংশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকার এই দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে এবং বর্তমানে সেই সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, দেশটির মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ শতাংশ।

১৯৯১ সালের পর এই প্রথম এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ল আর্জেন্টিনা। বুধবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনার বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার গত ফেব্রুয়ারিতে ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে দেশটির পরিসংখ্যান সংস্থা মঙ্গলবার জানিয়েছে। যা গত ১৯৯১ সালের পর থেকে আর্জেন্টিনায় হাইপারইনফ্লেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ।

লাতিন আমেরিকার এই দেশটির সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, গত ১২ মাসের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতি ১০২.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা গ্রাহক মূল্য সূচকে (সিপিআই) মাসিক উচ্চ-প্রত্যাশিত ৬.৬ শতাংশ হারেরও বেশি এবং বছরের শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ১৩.১ শতাংশ বৃদ্ধি।

রয়টার্স বলছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির এই হারের কারণে আর্জেন্টিনায় দ্রব্যমূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির বাজার, দোকান এবং বাড়িগুলোতে মানুষের কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে।

রাজধানী বুয়েনস আইরেসের উপকণ্ঠে সান ফার্নান্দোর একটি বাজারে পণ্যের দাম দেখছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আইরিন দেবিতা। ৭৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, ‘কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, কোনও টাকা নেই, মানুষের কাছে কিছুই নেই, তাহলে তারা কিভাবে কিনবে?’

রয়টার্স বলছে, আর্জেন্টিনায় মুদ্রাস্ফীতি এত বেশি যে, পণ্যের দাম প্রায় প্রতি সপ্তাহেই পরিবর্তিত হয়। দেবিতা বলছেন, ‘অন্যদিন আমি এসে তিনটি ট্যানজারিন, দু’টি কমলা, দু’টি কলা এবং আধা কেজি টমেটো চেয়েছিলাম। দোকানি আমাকে সবমিলিয়ে দাম ৬৫০ পেসো বলার পর আমি তাকে সবকিছু বের করে রেখে শুধু টমেটো দিতে বলি। কারণ আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না।’

সরকার অবশ্য পণ্যদ্রব্যের ক্রমবর্ধমান এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেও তা কার্যত ব্যর্থই হয়েছে। এর ফলে জনগণের উপার্জন করার সক্ষমতা, অর্থ সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছে এবং একইসঙ্গে আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

এছাড়া বিদ্যমান এই আর্থিক পরিস্থিতি এই বছরের শেষের দিকে নির্ধারিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস করে দিয়েছে।

রয়টার্স বলছে, রাজপথে অনেকেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কথা বলতে পারেন। তবে এটি কেবল মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, কারণ বেশিরভাগ মানুষই যা বেতন পান বা উপর্জন করেন প্রায়শই তার তুলনায় দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি হয়ে গেছে।

এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে শস্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।

৫০ বছর বয়সী প্যাট্রিসিয়া কুইরোগা বলছেন, ১০০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি সহ্য করা অসম্ভব। পণ্য কেনার জন্য লাইনে অপেক্ষা করার সময় রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি ক্লান্ত, যা হচ্ছে শুধু এই সব নিয়েই ক্লান্ত, যখন মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছেন তখন রাজনীতিবিদরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছেন। এভাবে আর চলতে পারে না।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.