আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

রাজস্ব আদায় স্বস্তিদায়ক নয়, ঘাটতি হবে ৭৫ হাজার কোটি টাকা : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে রাজস্ব ঘাটতি ৭৫ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সোমবার (২৭ মার্চ) সংস্থাটির ধানমন্ডির কার্যালয়ে আগামী ২০২৩-২৪ সালের জাতীয় বাজেট নিয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমন মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. তৌফিক ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। ৩.১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রথম ৬ মাসে। প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক সূচকে আনা ও আগামী ছয় মাসে কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর এনবিআরকে বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া এবং সেটা কখনই পূরণ করতে পারে না। ভ্যাট ও আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। সরকারের আমদানি নির্ভরতায়ে শুল্ক খাত থেকে বড় ধরনের রাজস্ব এলেও আমদানি সীমাবন্ধতায় সেটাও কমে গেছে। যার প্রতিফলন রাজস্ব আহরণের দেখছি। রাজস্বের যে সূচক আমরা দেখছি, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে রাজস্ব আদায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম হবে।

এর আগেও গত ডিসেম্বরে সিপিডি রাজস্ব ঘাটতির কথা ৬৪ হাজার কোটি টাকা বলেছিল। কিন্তু অবস্থার উন্নতি যেহেতু হচ্ছে না, তাই ঘাটতি আর একটু বেশি হতে পারে। সে হিসেবে রাজস্ব আহরণ ৩ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের রাজস্ব আহরণের ঘাটতি নিয়ে আইএমএফের যে আশঙ্কা, সেটা আমাদেরও মনে হচ্ছে। এনবিআরের সম্পদ আহরণের দুর্বলতা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের আওতা দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সরকারের ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট ঘাটতি বেশি ছিল।

ফাহমিদা বলেন, বর্তমান সরকার চলতি মেয়াদের সর্বশেষ বাজেট হতে যাচ্ছে এটা। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও এটা পুনরুদ্ধার করা, সরকারের যে অর্জন রয়েছে সেটাকে সুসংহত করা এবং নতুন বাস্তবতার প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার মধ্যে এক সমন্বয় সাধন, অর্থাৎ কোনটাকে ছাড় দিয়ে কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবো সেটার বিবেচনা। স্থিতিশীল বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী বছরের যে জাতীয় নির্বাচন, সেই নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন হবে। এটা করতে গিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে।

অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও সুশাসন না হওয়াই বড় দুর্বলতা উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় ধরনের সংকট এখন আর বলা যাচ্ছে না। অর্থনীতির ভেতরের দুর্বলতা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা কারণ হয়ে থাকলেও বড় প্রতিবন্ধকতা নয়। অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও সুশাসন না হওয়াই বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইরের প্রতিঘাত বিবেচ্য বিষয় হলেও মূল নিয়ামক নয়। সেটা বিবেচনা নিয়ে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনের আগের বছরে সেটা নেওয়া কতটা সহজ হবে সেটা সময় বলে দেবে।

৬টি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার বিষয় উল্লেখ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব কাঠামো, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও মূল্যস্ফীতি, সামাজিক বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত আগামী বাজেটে বড় বিবেচ্য বিষয়। জাতীয় উন্নয়ন ব্যয় অনেকখানি কমছে। রিজার্ভ সংরক্ষিত রাখতে আমদানি সীমিত রাখা হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক চলকগুলোর অনেকটা শ্লথ গতি দেখা যাচ্ছে। এটা রুখতে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এর ফলেও কিন্তু অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকগুলো পণ্যের দাম নিম্নমুখী। কিন্তু আমাদের দেশে সেগুলোর প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও তার প্রতিফলন আমাদের দেশে দেখছি না। বাণিজ্য ভারসাম্যে ঝুঁকি রয়েছে। রিজার্ভের তেমন উন্নতি দেখতে পারছি না। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে ৯.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। যদিও নন-গার্মেন্টেস পণ্যের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যার বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত রেমিটেন্স আসছে না। বৈদেশিক সাহায্য ১২.২ শতাংশ কমেছে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগেরও খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যায়নি। এক সময় জাতীয় সঞ্চয়পত্রের অনেক প্রবৃদ্ধি দেখে শঙ্কিত হতাম, এখন আবার উল্টো দিকে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে ঋণ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কিছু কিছু বাণিজ্য ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর বাইরে আবার টাকার সরবরাহ বাড়ছে। বাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করছি। সুশাসনের অভাব রয়েছে। আইএমএফ থেকেও ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের কথা বার বার বলা হচ্ছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.