আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে

বিনিয়োগকারিদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না আইসিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিনিয়োগকারিদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-র উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কার্যক্রম পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক। বর্তমানে পুঁজিবাজারের মন্দাদশার প্রভাব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির ওপরও পড়েছে।
গত এক বছর ধরে পুঁজিবাজার পতনমুখী হওয়ায়– আইসিবির আয়েও তার প্রভাব পড়েছে। ফলে আমানত রাখার একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হয়েও আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে গভীর সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড আইসিবিতে ৮৪ কোটি টাকা মেয়াদি আমানত রাখার পর সম্প্রতি মেয়াদ শেষে নগদায়নের অনুরোধ করে। কিন্তু, আইসিবি দিতে পেরেছে মাত্র ৬৭.৬৯ কোটি টাকা।
আমানতের বাকি টাকা ফেরত পেতে কয়েক দফা চিঠি পাঠানোর পরও কোন কাজ না হওয়ায়, গ্যাস কোম্পানিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠালে জবাবে আইসিবি বলেছে, শেয়ারবাজারে পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় শেয়ার বিক্রি করে অর্থ উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরলে প্রাপ্য অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।
গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংককে লেখা চিঠিতে আইসিবি ক্রেতার অভাবের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মন্দাকে দায়ী করেছে। এর আগে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির আমানতের টাকা ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিলে গত ফেব্রুয়ারিতেও একই কথা বলেছিল আইসিবি।
আইসিবির সূত্রগুলোর জানায়, পুঁজিবাজারে ক্রেতার অভাবে শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় আমানত মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর আমানতকারীদের কাছে তাদের বিনিয়োগ নবায়নের অনুরোধ করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ কর্পোরেশনটি।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন জানান, তারা পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতির কারণে আরও কিছু কোম্পানির আমানতের মূল অর্থ ফেরত না দিয়ে লভ্যাংশ পরিশোধ করে মূল অর্থ পুনঃবিনিয়োগের অনুরোধ করেছেন। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিকেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিন্তু তারা এটি প্রত্যাখ্যান করে।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, ‘আইসিবিতে আমাদের কিছু টাকা আটকে আছে। আমানতের বড় অংশই তারা ফেরত দিয়েছে। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা নেই’।

গ্যাস কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ বিভাগ) মোহাম্মদ সোলাইমান গাজী বলেন, আইসিবি আমাদের তহবিল পুনঃবিনিয়োগ করতে বলেছে, তবে কোম্পানির নিজস্ব আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নেই জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
তবে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেছেন, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
‘যারা মেয়াদি আমানত ভাঙ্গতে চাচ্ছে, তাদের প্রতিনিয়ত টাকা দিচ্ছি। কিন্তু, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির আমানতের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে আইসিবি, তাই তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। পুঁজিবাজার ছাড়া বর্তমানে আইসিবি আর কোথাও বিনিয়োগ করছে না’।
‘পুঁজিবাজার এখন এমনিতেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ফলে আমানতকারীদের টাকা দিতে হলে এই সময়ে আইসিবিকে শেয়ার বিক্রি করতে হবে। তাতে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই বাজার স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
‘আমরা চাইলে আজকেই শেয়ার বিক্রি করে টাকা দিয়ে দিতে পারব। কিন্তু, আইসিবি শেয়ার বিক্রি করলেও যেন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্যই তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে’- যোগ করেন আবুল হোসেন।
সরকারের বিভিন্ন কোম্পানি আইসিবিতে তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদে বিনিয়োগ রাখে। মেয়াদ শেষ হলে কোন কোন কোম্পানি লভ্যাংশ নিয়ে মেয়াদি আমানত পুনঃনবায়ন করে। আবার কারো অর্থের প্রয়োজন হলে নগদায়ন করে তা তুলে নেয়।
পুঁজিবাজার উন্নয়নের ম্যান্ডেট নিয়ে গড়ে উঠা আইসিবি বিভিন্ন কোম্পানির আমানতের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে থাকে। বিনিয়োগ করা তহবিল থেকে যে মুনাফা আসে, সেখান থেকে আমানতকারীদের মুনাফা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি মূল অর্থও ফেরত দেয় সংস্থাটি। পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো হলে আইসিবির মুনাফাও বাড়ে।
বর্তমানে আইসিবি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মোট প্রায় ৯,৩৫৩ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত রয়েছে আইসিবির কাছে। এর মধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ৫,৭৭৪ কোটি টাকা।
আইসিবির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের মধ্যে রাষ্টায়ত্ত সোলানী, জনতা, অগ্রণী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মেয়াদি আমানত রয়েছে ৩,৫৪৬ কোটি টাকা। অবশিষ্ট আমানত নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
গত এক বছর ধরে পুঁজিবাজার পতনমুখী হওয়ায় মুনাফা কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে সংস্থাটি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে আইসিবির নিট মুনাফা হয়েছে ৪৬.৫ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে মুনাফা ছিল ১৪০ কোটি টাকা।

শেয়ারের দাম কমে যাওয়া ও ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজার ক্রেতাশুন্য হয়ে পড়ছে। ফলে শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না সংস্থাটি। এতে ক্যাপিটাল গেইন থেকে আইসিবির আয় কমে গেছে। আবার মন্দা বাজারে আইসিবি শেয়ার বিক্রি শুরু করলে– পুঁজিবাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ক্যাপিটাল গেইনও কমে গেঠে সংস্থাটির।
এছাড়া, আইসিবি’র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান– আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, নিজস্ব পোর্টফোলিও’র পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচা করে ক্যাপিটাল গেইনের পাশাপাশি কমিশন চার্জ থেকে আয় করে। কিন্তু, পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনা-বেচা কম হওয়ায় কমিশন চার্জ বাবদও কোম্পানিটির আয় কমে গেছে।
গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ক্যাপিটাইল গেইন থেকে আইসিবি আয় করে ৫১২.৩১ কোটি টাকা। ফি, কমিশন ও সার্ভিস চার্জ বাবদ আয় হয় ১৩০ কোটি টাকা। কিন্তু, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ দুই ধরনের আয়ের পরিমাণ কমে যথাক্রমে ২০৮ কোটি ও ৯৯ কোটি টাকা হয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.