অনলাইন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনছেন যাত্রীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : সার্ভারের ভোগান্তি ছাড়াই তৃতীয় দিনে চলছে ঈদযাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। রোববার (৯ এপ্রিল) বিক্রি হচ্ছে ১৯ এপ্রিলের টিকিট। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ পালন করতে অনলাইন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনছেন যাত্রীরা।
জানা গেছে, শনিবার (৮ এপ্রিল) সার্ভার জটিলতায় ‘রেলসেবা’ অ্যাপসে প্রবেশ করতে পারেননি অনেকেই। আবার প্রবেশ করতে পারলেও টিকিট বুকিং অপশনে ক্লিক করার পরে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকেছেন, পরের ধাপে সিলেক্ট হলেও টিকিট পারচেজ (কেনা) সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট শেষ হয়ে যায়।
আজ (রোববার) এই জটিলতা অনেকটাই কেটে গেছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, শনিবারের সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি আজ সার্ভার সংক্রান্ত কোনো জটিলতা হচ্ছে না। ঈদযাত্রায় বরাদ্দের চেয়ে যাত্রী কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অনেকে টিকিট পাবেন না এটাই স্বাভাবিক।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ে হেল্পলাইন’ নামক দেড় লাখ রেলযাত্রীদের একটি ফেসবুক গ্রুপে যাত্রীরা জানান, রোববার সার্ভার জটিলতা ছাড়াই সকাল থেকে টিকিট কিনতে পারছেন তারা। তবে যথারীতি উত্তরবঙ্গের টিকিটের প্রচুর চাপ। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের প্রায় সব ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। উত্তরবঙ্গে বাড়তি ট্রেনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, সকাল সকাল কুড়িগ্রামের তিনটি টিকিট কিনতে পেরেছি। খুবই আনন্দ লাগছে। ঘরে বসেই ভোগান্তি ছাড়া টিকিট কাটতে পেরেছি।
এদিকে আল-আমিন নামে এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় লালমনিরহাট এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি সব বিক্রি শেষ।
কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, রোববার আগাম টিকিট প্রত্যাশীরা সার্ভার জটিলতা ছাড়াই টিকিট কিনতে পারছেন। এখন পর্যন্ত কতগুলো টিকিট বিক্রি হয়েছে এই ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
তিনি বলেন, শনিবার বুকিংয়ের চাপ বেশি পড়ায় অনেকে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে গেছেন। প্রতি মিনিটে ৮ হাজার হিট করার সক্ষমতা থাকলেও সার্ভারে হিট পড়ছে লাখের ওপর। আর এ কারণেই জটিলতা তৈরি হয়।
রেল কর্মকর্তারা জানান, অ্যাপসে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ১০ লাখ ভিজিটর প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া প্রতি মিনিটে টিকিট বিক্রি করা যায় ৮ হাজার। কিন্তু শনিবার টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ অনেকটাই বেশি ছিল। কমপক্ষে সাড়ে ১৩ লাখ ভিজিটর একবারে প্রবেশ করছেন, আর এ কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
আগামীকাল (সোমবার) বিক্রি করা হবে ২০ এপ্রিলের টিকেট ও মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ২১ এপ্রিলের টিকিট। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এবার ঈদে ট্রেনে প্রতিদিন বিক্রি করা হবে ২৫ হাজার ৭৭৮টি টিকিট।
রেল কর্মকর্তারা আরও বলছেন, বরাবরই প্রথম দুইদিনের টিকিটের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। শেষ দুই দিনের টিকিটের জন্য মানুষের হাহাকার বেশি থাকে। এবার অনলাইনে কয়েক মিনিটেই হয়তো শেষ দুইদিনের টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে।
শনিবার এক টিকিটের বিপরীতে ৪৭ জনের চেষ্টা
ঈদযাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। টিকিট ছাড়ার পরপরই নিমিষেই শেষ হয়ে যায় উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের প্রায় ১৩ হাজার টিকিট। শনিবার সকাল ৮টার সময় অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই রেলসেবা অ্যাপস ও রেলের পোর্টালে এক আসনের বিপরীতে টিকিট কাটার চেষ্টা করেন ৪৭ জন। ১৮ এপ্রিলের ২৮ হাজার টিকিটের জন্য একসঙ্গে লগইন করেন সাড়ে ১৩ লাখ টিকেট প্রত্যাশী।
জানা গেছে, উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বা সিলেটগামী পূর্বাঞ্চলের কিছু টিকিট রোববার পর্যন্ত অবিক্রিত আছে।
উত্তরবঙ্গের একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকিট শেষ হতে সময় নেয় দুই ঘণ্টা। ঢাকা থেকে রাজশাহীতে চলা চার আন্তনগর ট্রেন- পদ্মা, সিল্ক সিটি, ধুমকেতু ও বনলতা এক্সপ্রেসের টিকিটও শেষ হয়ে যায় সাড়ে ৯টার দিকে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, একসঙ্গে অনেক মানুষ চেষ্টা করায় সার্ভারে কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। সবাই ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট পাচ্ছেন না। ফলে অনেকবার চেষ্টা করতে হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে হিট কমতে থাকায় এই জটিলতা কাটতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।