আজ: রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

মুসলিম দেশগুলোতে স্বর্ণের মজুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সোনা-রুপাসহ সব খনিজ পদার্থ আল্লাহপ্রদত্ত রিজিকের অংশ। মহান আল্লাহ গোটা পৃথিবীর আনাচেকানাচে সোনা-রুপার খনি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। যার সবটির খোঁজ এখনো মানুষ পায়নি। যেগুলো পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সব এখনো পর্যন্ত তোলা সম্ভব হয়নি। যেমন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কথাই ধরা যাক। যে দেশটিকে বিশ্ববাসী অভাব পীড়িত দেশ হিসেবে চেনে। অথচ এই দেশটির ব্যাপারে ‘ফোর্বস’-এর এক রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘স্বর্ণের খনির ওপর বসে আছে আফগানিস্তান।’ শুধু স্বর্ণ নয়, প্লাটিনাম, রৌপ্য, তামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও ইউরেনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতু ও খনিজ পদার্থের বৃহত্তম মজুদের দেশ হওয়ার সক্ষমতা আছে দেশটির। দেশটিতে এত বেশি লিথিয়াম আছে বলে বিশ্বাস করা হয় যে বলা হয়ে থাকে—‘আফগানিস্তান একদিন লিথিয়ামের সৌদি আরব’ হিসেবে পরিচিত হতে পারে। এর খনিজ পদার্থের সম্মিলিত মূল্য আনুমানিক এক ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। (ফোর্বস ডটকম)

বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ স্বর্ণের মজুদ অমুসলিমদের কাছে থাকলেও একসময় মুসলিমদের কাছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ ছিল। ১৩২৪ সালে মালির প্রভাবশালী ধনী মুসলিম সম্রাট প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করে বহির্বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন, যখন তিনি প্রায় চার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হজ করতে যান। সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিল প্রায় ৬০ হাজার মানুষের এক বিশাল বহর। যাদের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ছিল সৈন্য ও দাস। দাসদের প্রত্যেকের কাছে ছিল চার পাউন্ড করে সোনার বার। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে ছিল ৮০টি উট, যাদের প্রত্যেকের পিঠে ৫০ থেকে ৩০০ পাউন্ড করে সোনা ছিল।

হজযাত্রায় পথে পথে বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ অকাতরে বিলি করার মাধ্যমে তিনি পশ্চিমা বণিকদের নজরে আসেন। সেই সফরে তিনি গরিবদের মুক্ত হস্তে দান করেন এবং শহরগুলোর শাসকদেরও প্রচুর স্বর্ণ উপহার দেন। তিনি যখন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পৌঁছান, তখন এত বেশি পরিমাণে অর্থ ও স্বর্ণ ব্যয় করেন যে মিসরের স্বর্ণের বাজারে বিশাল মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় এবং অর্থনীতিতে ধস নামে। এটা জানতে পেরে ফেরার পথে মুসা মিসরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে স্বর্ণ ধার নেন। কিন্তু এর পরও মিসরের স্বর্ণের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে প্রায় এক দশক সময় লেগেছিল।

এই তথ্য জানার পর প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা কী? নিম্নে অন্য কয়েকটি মুসলিম দেশের মজুদকৃত স্বর্ণের হিসাবও তুলে ধরা হলো—

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, সৌদি আরব ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের হিসাব অনুযায়ী ৩২৩.১ টন স্বর্ণ মজুদ আছে। উল্লেখ্য যে এক টন স্বর্ণ প্রায় ৩৫,২৭৪ আউন্সের সমান। এক আউন্স স্বর্ণ গ্রামের হিসাবে দাঁড়ায় ২৮.৩৪৯৫ গ্রাম। আর ১১.৬৬ গ্রামে হয় এক ভরি। সে হিসাবে এক আউন্স স্বর্ণকে ভরিতে রূপান্তর করলে তার পরিমাণ হয় ২.৪৩ ভরি। অর্থাৎ এক টন স্বর্ণের মানে হলো, ৮৫ হাজার ৭১৫.৮২ ভরি। এই হিসাব অনুযায়ী সৌদি আরবে প্রায় দুই কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ২৫ ভরি স্বর্ণের মজুদ আছে।

পবিত্র কাবা শরিফের দরজায় রয়েছে দুই শ ৮০ কেজি খাঁটি সোনা, যা সৌদির প্রয়াত বাদশাহ খালিদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ ১৯ অক্টোবর ১৯৭৯ নির্মাণ করেন। (ইজিপ্ট টুডে ডটকম)

লেবানন, যেটি বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে, তাদের কাছেও ২৮৬.৮ টন রয়েছে। ভরি হিসাবে যার পরিমাণ দুই কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮২৮ ভরি। উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ায় স্বর্ণ মজুদ আছে ১৭৩.৬ টন। ভরি হিসাবে যার পরিমাণ এক কোটি ৪৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৭ ভরি। লিবিয়ার কাছে আছে ১১৬.৬ টন, যা ভরির হিসাবে ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৬ ভরি। ইরাকে স্বর্ণের মজুদ আছে ৯৬.৩ টন। মিসরে আছে ৮০.৬ টন। উপসাগরীয় রাষ্ট্র কুয়েত ও কাতার যথাক্রমে ৭৯ টন এবং ৫৯.৮ টন। জর্ডানে আছে ৫৬.৯ টন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে ৫৫.৩ টন। (ফোর্বস মিডল ইস্ট)

এ ছাড়া ট্রেডিং ইকনোমিকসের তথ্য মতে, তুরস্কে স্বর্ণের মজুদ আছে ৩৯৩ টন, উজবেকিস্তানে ৩৮৩.৫০ টন, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৮.৫৭ টন, ইরাকে ৯৬.৪২ টন, পাকিস্তানে ৬৪.৬৫ টন, বাংলাদেশে আছে ১৩.৯৭ টন। ভরি হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ১১ লাখ ৯৮ হাজার ১০৯ ভরি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.