আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। রোজা ও গরমের কারণে চিনির চাহিদা বেড়েছে। হঠাৎ বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ৫ টাকা। সরকারিভাবে চিনির দাম কমানোর পাশাপাশি শুল্ক কমানো হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশ্ববাজারে দাম কমার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও চিনির মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক ও মিল মালিকদের দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারিতে শুক্রবার মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০ টাকায়। গতকাল একদিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে ৪ হাজার ২০০ টাকায় ওঠে।

এর আগে ৬ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির দাম পুনর্নির্ধারণ করে। নতুন করে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা ও মোড়কজাত চিনির দাম ১০৯ টাকা বেঁধে দেয়া হয়, আগে যা ছিল যথাক্রমে ১০৭ ও ১১২ টাকা ।

পাইকারি বাজারে প্রতি মণ চিনি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামে পণ্যটি বিক্রি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতেও পাইকারি পর্যায়ে চিনির দাম কমেনি। সর্বশেষ সরকারিভাবে চিনির দাম কেজিপ্রতি আরো কমিয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপরও স্থিতি ফেরেনি চিনির পাইকারি বাজারে, বরং গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারে কয়েক মাস আগে দেশে চিনির পাইকারি দাম বেড়ে মণপ্রতি ৪ হাজার ৪০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। তবে শীত মৌসুমে চাহিদা কমে আসার পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক হয়ে এলে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের বাড়তি চাহিদা ছাড়াও রোজায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এনবিআর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। সে হিসেবে কাস্টমসে শুল্কায়ন করা অপরিশোধিত চিনিতে ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হবে আমদানিকারকদের। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা গেজেটে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা, পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি ৬ হাজার টাকা স্পেসিফিক ডিউটি (ফিক্সড ডিউটি) প্রত্যাহার করা হয়। হ্রাসকৃত শুল্ক সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়। শুল্ক কমানোর পরও পাইকারি বাজারে দামে কোনো প্রভাব পড়েনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজায় চিনির চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমেও এর চাহিদা বেশি থাকে। মূলত গরমে শরবতসহ চিনিজাতীয় তরল খাদ্যের চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করছেন।

দেশে বার্ষিক চিনির চাহিদা প্রায় ২২-২৪ লাখ টন। প্রতি মাসে চিনির চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টন। তবে রোজা ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিনির চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে মিলগেট থেকে ভোক্তা পর্যন্ত চিনির দাম লাগামছাড়া হয়ে ওঠে। মৌসুমের আগেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে মজুদ প্রবণতা বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অপরিশোধিত চিনির পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এক সময় দেশে চিনির বার্ষিক উৎপাদন ছিল প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টন। সরকারি ১৫টি মিল থেকে এসব চিনি উৎপাদন হতো। তবে দুই বছর ধরে দেশের ছয়টি চিনিকলে উৎপাদন বন্ধ। যার কারণে উৎপাদন কমে ২৫-৩০ হাজার টনে নেমেছে। এ বছর চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার টন। ২৫ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে নয়টি চিনিকলে মাড়াই মৌসুম শুরু হয়। গত দুই মৌসুমের মতো পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর, রংপুর, পাবনা ও কুষ্টিয়া সুগার মিলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সরকারি চিনি সরবরাহ কার্যত বন্ধ থাকায় বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো দেশের চিনির বাজারে দাম নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.