শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়ার দাবি বিজিএমইএর
নিজস্ব প্রতিবেদক : তৈরি পোশাকের সকল কারখানায় মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সংগঠনের মহাসচিব ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত মোট ২ হাজার ১৫১টি কারখানার মধ্যে ঢাকায় চালু রয়েছে এক হাজার ৮৯৪টি আর চট্টগ্রামে ২৫৭টি। শতভাগ কারখানায় মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়েছে ২ হাজার ১৪৫টি অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৭২ শতাংশ কারখানায়। অবশিষ্ট ৬টি কারখানার উৎসব ভাতা আজকের মধ্যে প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা আজকের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিজিএমইএর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক কারখানাগুলো ১৬ এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে আজকের (২০ এপ্রিল) মধ্যে সকল শ্রমিক ভাইবোনদেরকে ছুটি প্রদান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান পূর্ববর্তী বছরগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এ বছরও পোশাক শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য ঈদুল ফিতর আনন্দময় করতে কষ্ট করে হলেও যথাযথ পাওনা পরিশোধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় পোশাকখাতের উদ্যোক্তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এবারও শ্রমিক ভাই-বোনেরা উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ঈদের আগে বেতন ভাতা বিষয়ে সমস্যা হতে পারে এরকম ৪৫০টি কারখানা প্রতিষ্ঠানকে ক্লোজ মনিটিরিং এর আওতায় এনে বিজিএমইএ সমস্যার ধরন বুঝে সমাধানের উদ্যোগ নেয়।
বিজিএমইএর সরাসরি হস্তক্ষেপে সমস্যায় থাকা ২৬টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারখানার সমস্যার ধরন বুঝে বিজিএমইএ কর্তৃক শ্রমিক, মালিক, ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে কারখানা বিক্রয় করে, মেশিনপত্র বিক্রয় করে অথবা ব্যাংকের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
এবারে আইন বহির্ভূত দুটি ইস্যুতে, এপ্রিল মাসের ১৫-২০ দিনের অগ্রিম বেতন ও বাড়তি ছুটির দাবিতে কিছু কিছু কারখানাতে ভাংচুর হয়েছে ।
সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ঈদের আগে শ্রমিকদের মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হবে। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি ছিল, এপ্রিলের ১৫-২০ দিনের বেতন অগ্রিম দিতে হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের বেতন মে মাসের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করার কথা রয়েছে। শ্রমিক চাইলে, মালিকের সক্ষমতা থাকলে অগ্রিম বেতন দেওয়া যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এক হাজার ৭৬৮টি কারখানা (৮২ দশমিক ১৯ শতাংশ) এপ্রিল মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়া হয়েছে।
বিজিএমইএ জানায়, এবারে প্রচলিত ধারার বাইরে বাড়তি ছুটির (১১ থেকে ১২ দিন ছুটি) দাবিতে কারখানা ভাংচুর হয়েছে। তথাকথিত শ্রমিক নেতা নামধারী ব্যক্তিদের ইন্ধন, গুজব রটানোর মাধ্যমে কারখানা ভাংচুর করা হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সরকারি ছুটির দিনে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট এলাকার তফসিলি ব্যাংকের শাখা খোলা রাখায় ব্যাংকের গভর্নর এবং সংশ্লিষ্ট শিডিউল ব্যাংকগুলোর এমডিদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ দেশের রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার জন্য সরকারি ছুটির দিনে ইপিবি, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ, আইসিডি কমলাপুর, ঢাকা কাস্টমস, মংলা কাস্টমস, বেনাপোল কাস্টমস ও পানগাঁও কাস্টমস হাউজ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কার্যালয় এবং একইসঙ্গে এসব কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশন-সংশ্লিষ্ট বন্দর, ব্যাংকের শাখা ও অন্যান্য স্টেকহোলিং প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ফারুক হাসান ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস, ট্রেন ও লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করে সে ব্যাপারে নজরদারি জোরদার এবং পণ্যবাহী ট্রাকে যাতে যাত্রী পরিবহন করা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন।