নতুন অর্থবছরের বাজেটে ধনীদের ওপর উচ্চ করারোপ চায় এনবিআর
নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন অর্থবছরের বাজেটে ধনীদের ওপর উচ্চ করারোপ চায় এনবিআর । রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন, যার পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ধনীদের আয়করের ওপর নির্ধারিত সারচার্জ বাড়াতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে ধনীদের আরো উচ্চ কর দিতে হতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বিদ্যমান সারচার্জ ৫ – ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে এনবিআর।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের নেতৃত্বে বাজেট সংশ্লিষ্ট ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার (২ মে) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় তারা আগামী বাজেটে অর্থবিলের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে আলোচ্য সারচার্জের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে বৈঠকে উপস্থিত এই কর্মকর্তা টিবিএসকে জানিয়েছেন।

ধনী করদাতাদের আয়করের ওপর এখন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ রয়েছে।
বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী, ব্যক্তি করদাতার সম্পদসীমা ১০ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে থাকলে তাকে ২০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আর ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের ওপর ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার উপরে সম্পদের জন্য ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়।
এছাড়া, ৩ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ থাকলে; অথবা নিজ নামে একাধিক গাড়ি থাকলে, বা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮ হাজার বর্গফুটের অধিক আয়তনের আবাসিক সম্পত্তি থাকলে- ন্যূনতম ১০ শতাশ সারচার্জ দিতে হয়।
এনবিআরের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলেছেন, বৈষম্য হ্রাস করতে হলে অতি-ধনীদের ওপর আরো করারোপ করা দরকার।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা সারচার্জ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাই, কারণ তা আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সাহায্য করবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিকই আছে।”
তিনি বলেন, “বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বেড়েছে। তাই আমাদের সম্পদে মনোযোগ দেওয়া দরকার।”
কার্যকরীভাবে বৈষম্য কমানোর জন্য সর্বোচ্চ হারের ব্যক্তি করদাতাদের বর্তমান কর হার পুনর্মুল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেন এই অর্থনীতিবিদ।
কোভিড শুরু হওয়ার পর ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ব্যক্তি করদাতার সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। এরপর তা আর বাড়ানো হয়নি। এতে ধনীরা সরাসরি সুবিধা পেয়েছে, বেড়েছে বৈষম্য।
টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরও ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপের পক্ষ মত দিয়ে বলেছেন, “এটা বিদ্যমান বৈষম্য কমাবে”।
রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য (কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যখন বাড়তি কর দরকার, তখন ধনীদের এ দায়িত্ব নেওয়া উচিত। সেজন্য সারচার্জ যৌক্তিক হারে বাড়ানো যেতে পারে।”
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই দেশে ‘সম্পদ কর’ নামে অতিরিক্ত কর ছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের দিকে এটা বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকার সম্পদ করের বিকল্প হিসেবে সারচার্জ আরোপ করে। শুরুতে ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকা ব্যক্তিদের ওপর সারচার্জ আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে তাতে ছাড় দিয়ে তিন কোটি টাকা করা হয়।
মাত্র ১৫ হাজার জন দেন সারচার্জ
রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন, যার পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশে এই সংখ্যা মোটেই যৌক্তিক নয়। অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই সংখ্যা হাস্যকর। প্রকৃত সম্পদশালীদের চিহ্নিত করতে এনবিআরকে আরো উদ্যমী হতে হবে।”
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্পদের মূল্যায়ন করা হয় ক্রয় মূল্যে, বাজার মূল্যে নয়। এর কারণে অনেকে সারচার্জের বাইরে রয়ে গেছে।
আলমগীর হোসেন ব্যাখ্যা করে বলেন, “ক্রয় মূল্যে সম্পদের মূল্যায়ন যৌক্তিক। কেননা এর সঙ্গে আয়করের সম্পর্ক আছে। কারো সম্পদ থেকে যদি আয় না হয়, ওই সম্পদকে বাজারমূল্যে বিবেচনা করে সারচার্জ আরোপ করা হলে সম্পদ বিক্রি করে তা দিতে হবে – যা যৌক্তিক নয়।”