আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ মে ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

অবৈধ মজুত-লাইসেন্স ছাড়া ধান কেনা ঠেকানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে সরকারিভাবে বোরো ধান ও চাল এবং গম কেনার কর্মসূচি। রোববার (৭ মে) দুপুরে সচিবালয়ের দপ্তর থেকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অবৈধ মজুত ও লাইসেন্স ছাড়া ধানের ব্যবসা বা ধান কেনা ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

গত ১৩ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে চার লাখ টন ধান, ১২ লাখ ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৪ টাকা। গমের সংগ্রহ মূল্য ৩৫ টাকা। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ টন। ধান, চাল ও গম সংগ্রহ চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে সারাদেশে সব খাদ্য গুদামে ধান ও চাল কেনা শুরু হবে। ক্রয় কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানাতে হবে আমরা ধান-চাল কেনা শুরু করলাম, যেন তাদের নজরদারিটা ঠিক থাকে।

তিনি বলেন, আমরা ধান সংগ্রহ করি শুধুমাত্র কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার জন্য। কারণ সরকার যদি ধান না কেনে, কেনার জন্য মাঠে না থাকে, তাহলে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কৃষকদের পর্যুদস্ত করে এটা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। আমরা ধান কেনার টার্গেটে পৌঁছাতে পারি আর না পারি, আমরা কেনার মধ্যে থাকলে তারা আর কৃষকদের ঠকাতে পারবে না।

‘আমরা চার লাখ বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। তারপরও আমরা বলেছি, বাজারে যদি সেই রকম অবস্থা থাকে, কৃষক যদি ন্যায্য মূল্য না পায় আমরা আরও বেশি কিনব। কৃষক যেন কষ্ট না পায় আমরা অবশ্যই তা নিশ্চিত করবো।’

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা ৬/৮ লাখ টন ধান কিনব।

তিনি বলেন, কৃষকরা বলেছিলেন সারের দাম বাড়ায় এক বিঘা জমিতে এখন ৬৬৫ টাকা বেশি গুনতে হবে। সেদিকে চিন্তা করে আমরা খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৩০ টাকা ধানের দাম নির্ধারণ করা হলে এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ২০ মণ ধান হলে কৃষক এক হাজার ৬০০ টাকা বেশি পাবে। তাহলে তাদের ৬৬৫ টাকা কাভার করা তাদের জন্য অসুবিধা হবে না।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ধান দিতে এসে যেন কৃষক কষ্ট না পায়। কৃষক আমাদের পেটের খাবার যোগান দেয়, কৃষক সম্মানিত ব্যক্তি, তাদের মর্যাদা দিতে হবে। কৃষক যেন ধান দিতে এসে ফিরে না যান। কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ হবে যে কৃষক ধান দেবে তার বাড়ি গিয়ে ময়েশ্চার মিটার (ধানের আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র) দিয়ে ময়েশ্চার (আর্দ্রতা) পরীক্ষা করা।

ধানের নির্ধারিত আর্দ্রতা থাকার পর কোনো কৃষককে ফিরিয়ে দেওয়া হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনারও নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের কোনো ক্রমেই ছাড় দেওয়া যাবে না। আট বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (আরসি ফুড) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) ঠিক থাকলে মাঠ পর্যায়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রকিউরমেন্ট হবে বলে আমরা বিশ্বাস।

‘খারাপ চাল ও পুরোনো চাল ছাঁটাই করে নতুন বলে যেন চালিয়ে দেওয়া না হয়। এটা যাতে কোনো ক্রমেই না হয়। নীতিমালা অনুসরণ করে ভালো চাল কিনতে হবে। মানের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না।’

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, পাশাপাশি মজুতের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেউ যেন অবৈধ মজুত না করে। যাদের ফুড গেইন লাইসেন্স নেই তারা যেন ধান কিনতে না পারে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত আমনে যে মিল মালিকরা চাল দিতে চুক্তি করেনি, এবার তারা চুক্তি করতে পারবে না। ফিট লিস্টে যেন কোনো ডিসি তাদের তালিকা না পাঠায়, এটা মনে রাখতে হবে। যারা চুক্তির ৫০ শতাংশের বেশি দিয়েছেন তাদের চুক্তি করতে দেওয়া হচ্ছে, তাদের ডিপজিট মানিও ফেরত দেওয়া হচ্ছে। যারা ৫০ শতাংশের কম দিয়েছে তাদের ডিপজিট মানি বাজেয়াপ্ত হচ্ছে তবে, চুক্তি করতে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সংগ্রহ ঠিক থাকলে, পেট ঠান্ডা থাকলে মাথা ঠান্ডা থাকে। অপরাধও কম হয়। আমাদের এসপি ও ডিসি সাহেবদের কষ্ট হয় না।

কৃষক ধানের দামে সন্তুষ্ট বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, মজুতের বিষয়ে আমরা এবার শক্ত অবস্থানে আছি। আমরা নতুন আইন করছি। এটি আগামী সংসদ অধিবেশনে উঠবে। মজুত, পরিবহন, চালের বস্তায় ধানের দাম লেখা- নানাবিধ বিষয়ের খুঁটিনাটি দেওয়া আছে। এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এটা মোবাইল কোর্টে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ আইনটি হলে যারা চাল প্যাকেটজাত করে সেই গ্রুপগুলোও ঠান্ডা হয়ে যাবে।

মন্ত্রী বলেন, প্যাকেটজাত করে চাল বিক্রি করা দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আমি নিজে মামলা করেছি। অনেকেই বলেছেন আপনি মামলা করেছেন, চেয়ার গেলো কী গেলো। আমি বলেছি আমি রিজাইন দেওয়ার জন্য রেডি আছি। কিছুই তো হয়নি। এটা নিয়ে ক্যাবিনেটে আলোচনা হয়েছে, আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.