মাগুরা শহরের ভূমিদস্যু কতৃক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী ও সাংবাদিক ছুরিকাঘাতে আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রকাশ্যে মার্কেট দখলে নিয়েও মন ভরেনি মাগুরার ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউলের ভূমিদস্যুতার হোতা মিন্টু ও সুমন বাহিনীর, সেই মার্কেটের মালিকের সন্তানকে এবার কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করল তারা।
ঘটনা মে ২৭ দুপুর বেলা, ভুক্তভোগি এনামুল হকের ছেলে ফাহিম মুন্তাসিন রাহাত কেবল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা আগের দিন বাসায় ফিরেছে। পরের দিন দুপুরে বাসা থেকে বের হলে পথেই মিন্টু, সুমন ও সুমনের ছেলে শায়ান আরো কয়েকজন মিলে হত্যার উদ্দেশ্যে এলপাথারি ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। ডান হাতে গুরুতর জখম নিয়ে রাহাত এখন শয্যাশায়ী, ওদিকে ৩১ মে রাহাতের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা। এই বিষয়ে একটি ভিডিও ক্লিপ এই সংবাদ দাতার হাতে এসেছে।
ঘটনার শুরু গত ফেব্রুয়ারীর ১৪ তারিখ রাত এগারোটায়, মাগুরার এই চিনহিত সন্ত্রাসি মিন্টু সুমন বাহিনী আব্দুর রহমান, তার ভাই এনামুল ও আসাদুজ্জামান সহ তাদের পারিবারিক মালিকানাধীন থাকা মার্কেট দখল করে নেয়। এ বিষয়ে মাগুরায় শত প্রচেষ্টা করেও কোন সুবিচার পাননি ভুক্তভোগী পরিবার, এমনকি করতে পারেন নি কোনো সংবাদ সম্মেলন।
মাগুরায় জানের ভয়ে আব্দুর রহমান, এনামুল ও আসাদুজ্জামান গত ২১ মার্চ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) মিলনায়তনে ক্র্যাব সাংবাদিকদের সহায়তায় ‘মাগুরায় সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক মার্কেট দখল’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
এই সংবাদটি নয়াদিগন্তে ২২ মার্চে “চাদা না দেয়ায় মাগুরায় মার্কেট দখলের অভিযোগ” শিরোনামে ছাপাও হয়।
আব্দুর রহমান বলেন, মাগুরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পূর্ব পাশে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের লাগোয়া দক্ষিণ পাশে ক্রয়সুত্রে জমিতে মার্কেট নির্মাণকালে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপ আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। তারা ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলামের লোকজন। তারা ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তিনি বলেন, আমরা জানুয়ারী ২০২৩ থেকে আমাদের মার্কেট চালু করেছি এবং তিনটি দোকানের ভাড়াটিয়া বসিয়েছিলাম। সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পেয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারী রাত ১১টার দিকে মার্কেটে হামলা চালায়। এ সময় মার্কেটের সিসি ক্যামেরা খুলে নেয়ারর পর লাইট বন্ধ করে বিভিন্ন দোকানের তালা ভেঙ্গে ডাকাতি করে। এ সময় সর্বমোট ৫ লাখ টাকা ও মালামাল লুটপাট করেছে। এরপর মার্কেটের সামনে ৫/৬ গাড়ি মাটি ফেলে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। জোরজবরদস্তি করে ভাড়াটিয়াদের বের করে দিয়ে এখন তারা সম্পূর্ন মার্কেট দখলে নিয়েছে।
আব্দুর রহমান বলেন, এ সময় আমরা পুলিশের শরনাপন্ন হলেও পুলিশ প্রশাসন আমাদেরকে কোন সহযোগিতা করেনি। এমনকি মার্কেটের একটি ট্রাক্টর হাতিয়ে নেয়ার সময় জনসাধারণ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন সদস্যকে ধরে ফেললেও পুলিশের সহায়তায় তারা ছাড়া পায়। পরের দিন অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো আমরা মাগুরা পৌরসভার মেয়রসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের অবগত করেও প্রতিকার পাচ্ছি না। পরবর্তিতে আদালতকে অবহিত করানোর পর মামলার বিষয়ে প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও থানা প্রশাসন নির্দেশ বাস্তবায়ন করে নাই। আমরা থানা প্রশাসনের অসহযোগিতার বিষয়টি অবহিত করে জেলা নির্বাহী ম্যাজেস্টিটের আদালতে মামলা করেছি। বিজ্ঞ আদালত তদন্তের ভার সিআইডির উপর ন্যস্ত করেছে।
তিনি বলেন মাগুরার অন্য কোন সাংবাদিক সাহস করে নাই এই বিষয়ে একটা নিউজ করতে, শুধু সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক এই বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করেন এবং তাকেও গত এপ্রিলের… এই বাহিনী তার স্ত্রী সন্তান সহ হত্যার চেষ্টা করে, রোস্তম মল্লিক মাগুরায় চিকিৎসা করিয়ে প্রানের ভয়ে এখন ঢাকায় বসবাস করছেন।
ফোনে যোগাযোগ করলে রোস্তোম মল্লিক এই সংবাদদাতাকে বলেন গত মার্চ ১২ ও ১৪ তারিখে রহমান ও এনামুলের পরিবারের সাথে জুলুম নিয়ে আমি আমাদের সংবাদ ও দৈনিক গনতদন্তে খবর প্রকাশ করি। এর পরেই শুরু হয় আমাকে হত্যার হুমকি।
রোজার ঈদের পরে গত এপ্রিলের ২৫ তারিখে আমাকে, আমার স্ত্রী ও সন্তানের সামনে সুমন, মিন্টু ও তাদের বাহিনী কুপিয়ে জখম করে, আমার স্ত্রী ও সন্তানও আহত হন। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি, এলেকায় ভয়ে যেতে পারছিনা।
আব্দুর রহমান বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি। আমাদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মূখে। আমরা স্থানীয়ভাবে কোন প্রতিকার পাইনাই। আমাদের পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মাঝে বসবাস করছে এবং এরকম মুহূর্তে আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার্থী ভাতিজাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে মিন্টু ও সুমন বাহিনী। ছেলেটার সামনে আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা। আমাদের সহায় সম্পদ নিয়েও মন ভরছেনা, এখন কেস উঠিয়ে নেয়ার ভয় দেখাতে আমাদের সন্তানকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে।
গত ৪ দিন ধরে অনেক কাকুতি মিনতি করলেও পুলিশ এই হত্যা প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কোনো কেস নিচ্ছেনা। থানায় গেলে বলছে ওসি সাহেব নাই।
এই বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলামের কাছে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এই বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন, এবং কোনো মিন্টু-সুমন বাহিনী সম্পর্কে তার ধারনা নেই বলে জানান।