আজ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ জুন ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

সিএমজেএফ’র আলোচনা সভায় বক্তারা

বাজেটে পুঁজি বাজার সরকারের কাছে অবহেলিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের স্থান না পাওয়াকে হতাশাজনক বলে দাবি করেছেন স্টেকহোল্ডাররা। তারা বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন কোনো কিছু আরোপ করা না হলেও প্রণোদনাও দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বাজেটে পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোন আলোচনা না থাকায় আমাদের মনে হচ্ছে এ খাতটি সরকারের কাছে একেবারেই অবহেলিত।
এতে বিনিয়োগকারীসহ খাত সংশ্লিষ্ট সবাই হতাশ হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে পুঁজিবাজারকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে পাঁচ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে তারা।
দাবিগুলো হচ্ছে, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১৫ শতাংশ করা, লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিাবাজারে তালিকাভুক্ত করা, ব্রোকার হাউজের লেনদেনের ওপর উৎসে কর কমানো এবং বন্ডে সুদের ওপরও আরোপিত লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহার করা।
গতকাল রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটোরিয়ামে ‘বাজেট ২০২৩-২৪: প্রেক্ষিত পুঁজিবাজার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন স্টেকহোল্ডাররা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের মতো বিকাশমান অর্থনীতিতে মূলধনের যোগান দিতে পারে শক্তিশালী পুঁজিবাজার। তাই বাজেটে ক্যাপিটাল মার্কেট অবহেলিত হওয়া ঠিক নয়। আপনার আমাকে প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে দেন, আমি সরকারে কাছে তুলে ধরব বাজেটে বিবেচনায় রাখার জন্য।
সিএমজেএফ ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) এর যৌথ উদ্যোগে সিএমজেএফ অডিটোরিয়ামে বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় সভায় সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটের ভালো দিক হলো নতুন করে কোনো কিছু আরোপ করা হয়নি। তবে হতাশার ও খারাপ দিক হলো পুঁজিবাজারের জন্য কোনো প্রণোদনাই নেই, এমনকি পুঁজিবাজর সম্পর্কে কোনো আলোচনাও নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রণোদনার দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে সরকারের মোট কর আদায় হ্রাস পাবে না বরং বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান আছে অনেক ভালো ব্যবসা করছে। অনেক শিল্পকারখানা আছে তালিকাভুক্ত না হয়ে অনেক সুবিধা ভোগ করছে কর/ভ্যাট কম দিচ্ছে। সুবিধা পেলে তারা তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ পাবে।

পৃথিবীর অনেক দেশই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পুঁজিবাজার। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও কেন যেন আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সেই অবস্থানে যেতে পারছে না জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, সরকারের একটু নীতি সহায়তা পেলে আমাদের পুঁজিবাজার অনেক কিছুই দিতে পারবে। এখানে সেই সম্ভাবনা রয়েছে। রাজস্ব আহরণ পুঁজিবাজার থেকেই বড় যোগান দিতে পারবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে পুঁজিবাজার বিষয়ে কিছু থাকবে। কিন্তু এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। অথচ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই।
ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি. রোজারিও বলেন, আমাদের অর্থনীতি এতদিন গরিব দেশ হিসেবে কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়েছে যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব তখন আমরা অনেক সুযোগ হারাব। এজন্য দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে আমাদের ছোট ছোট কোম্পানিগুলোর দিকে নজর দিতে হবে এবং তাদের পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ দিতে হবে।
বাইরের দেশগুলোতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারে অনেক বেশি ব্যবধান থাকে। যা আমাদের দেশে অনেক কম। তাই এই ব্যবধান আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। এটি একটি রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে হয়ে থাকে জানিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, বাজেটে যখন পুঁজিবাজারের উপস্থিতি থাকে না, তখন বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বার্তা যায়, সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে না। আমরা আশা করব, প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় এটি স্থান পাবে।
আমরা যেখানে বলছি, স্মার্ট বাংলাদেশ অভিযাত্রার দিকে যাত্রা শুরু করেছি। সেখানে প্রথাগত আর্থিক খাতকে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী, এতে কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের অর্থনীতি টিনেজার অর্থনীতি। টিনেজার হওয়ায় এর একটা উদ্যম রয়েছে, কিছুটা লাফা লাফিও রয়েছে, তাই এটিকে নজরদারি করতে হচ্ছে। টিনেজারদের যেমন মা বাবাকে নজরদারি করতে হয় তেমন আমাদেরকেও গ্রোয়িং অর্থনীতিকে নজরদারি করতে হচ্ছে, এটাকে ফিডিং করতে হচ্ছে। আর এই ফিডের প্রধান উপকরণই হচ্ছে ক্যাপিটাল। যে যাই বলুক না কেন এটার (অর্থনীতির) দরকার মানি, মানি এবং মানি। মানি কয়েক রকম হয় তরল মানি, এসেট ও ফ্রোজেন মানি। এ সকল অর্জন হবে যদি আমরা ক্যাপিটাল মার্কেটে শক্তি বৃদ্ধি করতে পারি।
মন্ত্রী বলেন, স্টক মার্কেট বাজেটে অবহেলিত এটি একটি বড় মেসেজ, আপনাদের পক্ষ থেকে আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে এটি পৌঁছে দেব। এছাড়া আমি আপনাদের দাবিগুলো শুনলাম, এগুলো নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের আলোচনা করব।

তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট ডমিন্যান্ট বা ড্রাইভ দিতে পারে এমন অর্থনীতি আমাদের হয়নি। আমরা সেদিকে যাচ্ছি। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে যেতে হলে প্রয়োজন অর্থের। পুঁজিবাজার সেই অর্থায়নের উৎস হতে পারে। আমরা সেদিকে যাব, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আমাদের অভিযাত্রা শুরু হবে।
মন্ত্রী পুঁজিবাজার বিষয়ক দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমি মনে করি এখন আমরা যে পর্যায়ে পৌঁছেছি আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগের তুলনায় অনেক দক্ষ, আমাদের বেটার টেকনোলজি, বেটার বিজনেস কমিউনিটি রয়েছে, তাই এখন আর অগ্রিম আয় কর (এআইটি) দরকার নেই, এটি তুলে দেয়া যায়। সংশ্লিষ্ট অথরিটির সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটি তুলে দিতে পারে।
দ্বৈত কর থাকা উচিত নয় বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এটি কেন হবে, একজন মানুষ টেক্স-তো একবারই দেবে। এটির কারণ ব্যাখ্যা হওয়া করা উচিত, এর গভীরে গিয়ে দেখা উচিত।
এছাড়া মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে লিস্টেড হওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এই আলোচনা সাত আট বছর আগেও শুনেছি। এখনও শুনছি, কিন্তু বছরের পর বছর তারা লিস্টেড না হয়েই ব্যবসা করছে আমাদের দেশে। এ বিষয়ে আমাদের আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, টোব্যাকো ইত্যাদি খাত এর আওতার বাইরে।
মাত্র ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর রেয়াত উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তি হতে উদ্বুদ্ধ করছে না। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য বাড়ানোর দাবি করেন বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান।
এছাড়া তিনি, লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বন্ডের উপর অগ্রিম চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা, লেনদেন কর নামিয়ে শূন্য দশমিক ০১৫ শতাংশ করা যা বর্তমানে ০.০৫ শতাংশ (শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ) রয়েছে করার দাবিও জানান। বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার এর বাইরে রাখলে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি দাবি জানান।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.