আজ: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ জুন ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

নতুন বিনিয়োগ ২৬ কোটি টাকা

গার্মেন্টস কারখানা তৈরী করবে শাশা ডেনিম

শাহ আলম নূর : তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিমস পোষাক শিল্পে বিনিয়োগ করবে ২৬ কোটি টাকা। নতুন বিনিয়োগের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি জিএ গার্মেন্টস লি: নামে একটি প্রাইভেট লি: গঠন করেছে। বিনিয়োগের ১৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ১২ কোটি টাকা আগামী দুই বছরে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার হবে।

তথ্যে দেখা যায় ১.৪১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি শাশা ডেনিম্স লি: ইতোমধ্যেই এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমূহে ৩.৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বিগত কয়েক বছরে উক্ত বিনিয়োগ থেকে একটি টাকাও লভ্যাংশ বাবদ পাওয়া যায় নাই। অথচ ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদ প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকা প্রদান করতে হচ্ছে অত্র কোম্পানিকে, এর সহযোগি প্রতিষ্টান সমূহ উপকৃত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের মালিকানাধীন শাশা ডেনিম্স লি:।

সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিম্স গার্মেন্ট্স এর পরিশোধিত মূলধন ছিল ১৫ কোটি টাকা যার মধ্যে শাশা ডেনিম্স এর বিনিয়োগ ছিল ১.৫ কোটি টাকা।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এর বিনিয়োগ ছিল ২.৫ লাখ টাকা এবং শাম্স মাহমুদ ও জারিন মাহমুদ উভয়ের বিনিয়োগ ১,৫০,০০০ টাকা করে। কিন্তু শেয়ারের জন্য কোন ডিপোজিট না থাকা সত্বেও শেয়ার প্রতি ১০ টাকা মূল্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এর নামে ১ কোটি টাকা মূল্যের দশ লক্ষ শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়, একই সাথে শাম্স মাহমুদ ও জারিন মাহমুদ উভয়ের নামে ৫০ লক্ষ টাকা পাঁচ লক্ষ শেয়ার করে মোট দশ লক্ষ শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়।

শাশা গার্মেন্টস লি: এ শাশা ডেনিম্স লি: এর বিনিয়োগ ৯৬.৪৬% থেকে ৪২.১৯% এ নেমে আসে। এতে শাশা গার্মেন্টস লি: শাশা ডেনিম্স লি: এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ফলে শাশা গার্মেন্টস্ লি: এর নিরীক্ষিত হিসাব শাশা ডেনিমস্ লি: এর বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত না হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শাশা গার্মেন্টস্ এর নিরীক্ষিত হিসাবের বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত থাকে।

উল্লেখিত তিন ব্যক্তির নামে শাশা গার্মেন্টস্ এর ২০ লক্ষ শেয়ার বরাদ্দকালে এর পুঞ্জিভূত লাভ ছিল ৩৫.২১ কোটি টাকা। শেয়ার অনুপাতে উক্ত লাভের টাকা বরাদ্দ হলে শাশা ডেনিমস্ লি: ১৯.১০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সমপরিমান টাকা উক্ত তিন ব্যক্তি লাভবান হয়। উক্ত শেয়ার বরাদ্দকালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞাতসারে হয়েছে। সুতরাং এটি বিনিয়োগকারীদের সাথে উক্ত তিন ব্যক্তির প্রতারণা বলে মনে করি।

৯৮.৩৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এনার্জি পাওয়ার কর্পোরেশন লি: এর শেয়ারে অত্র কোম্পানির বিনিয়োগ ছিল ৯৮.৩ কোটি টাকা। যখন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্টান কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার কারণে লোকসানের কবলে পড়ে তখন হঠাৎ করে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্টানের শেয়ারে অত্র কোম্পানির বিনিয়োগ ৩৩.৯১ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ১৩২.২৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

তারপরেই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্টানের সম্পদমূল্য শেয়ারপ্রতি ২.০৩ টাকা দেখিয়ে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে অত্র কোম্পানির বিনিয়োগ দেখানো হয় ২৬.৮৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ থেকে অত্র কোম্পানির ১০৫.৪০ কোটি টাকা উধাও, বাকি বিনিয়োগ ভবিষ্যতে উধাও হয়ে যেতে পারে বলে আমার ধারণা।

সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান শাশা টেক্সটাইলস্ লি: যাত্রা শুরু হয় ৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের মাধ্যমে, যার মধ্যে শাশা ডেনিমস্ এর মূলধন ৬.৭০ কোটি টাকা। বর্তমানে উক্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে দাড়িয়েছে ৩০.৮৫ কোটি টাকায়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শাশা ডেনিমস্ এর মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্য ছয় উদ্যোক্তার মূলধন বৃদ্ধি পায় নাই। কারণ প্রতিষ্ঠানটি অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখিত কারণসমূহ বিশ্লেষন করলে দেখা যায় সাবসিডিয়ারি কিংবা সহযোগি প্রতিষ্টানে সাফল্যের ক্ষেত্রে পুরোপুরি কৃতিত্ব আলোকিত তিন উদ্যোক্তা ব্যক্তিবর্গের আর ব্যর্থতার দায়ভার বহন করতে হয় শাশা ডেনিমস্কে। এছাড়া অনুষ্ঠিতব্য বিশেষ সাধারণ সভায় আলোচিত এজেন্ডা বা সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হলে শাশা ডেনিমস্ লি: এক কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার উপর ১২ কোটি টাকার দুই বছরের ব্যাংক সুদ তো আছেই।

তাই আপনার মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, সংখ্যাগরিষ্ট শেয়ারের অজুহাতে উক্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করিয়ে স্বার্থপরতার পরিচয় দিবেন না। উক্ত সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে যদি শাশা ডেনিমস্ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দায়ভার পরিচালনা পর্ষদকেই বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারবে না, কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বই হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।

কোম্পানি সেক্রেটারি আহসান আহমেদ খান বলেন জিএ গার্মেন্টসে বিনিয়োগের বিষয়টি এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শাশা ডেনিম্ লি: এর পরিচালনা পর্ষদ তাদের উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন অপর এক কোম্পানি জিএ গার্মেন্টসে বিনিয়োগ করার বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার জন্য একটি ইজিএম করেছে। এখানে বিনিয়োগকারিদের কাছ থেকে নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে অনুমতি নেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে কোম্পানির ঢাকা রপ্তানিকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটে নতুন লুম বসানোর মাধ্যমে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শাশা ডেনিমস ডিইপিজেডের প্লটে ১০৫টি লুম মেশিন সংস্থাপন করবে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে কোম্পানিটির রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন জিএ গার্মেন্টসে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত কার্যকরে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নেয়া হয়েছে। জিএ গার্মেন্টসে বিনিয়োগের লক্ষ্যে শাশা ডেনিমসের কিছু সম্পদ বিনিময়করা হবে। আর কিছু টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। তবে এসবের বিনিময়ে শাশা ডেনিমসের কী পরিমাণ শেয়ার কেনা হবে, কত দরে কেনা হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.