আজ: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ জুন ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

সিটি নির্বাচন

সিলেটে কয়েকটি কেন্দ্রে পানি, বন্যার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের ভোট আর মাত্র একদিন পর। টানা ছয়দিন ধরে সিলেটে হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এ কারণে নগরের অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এরই মধ্যে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে।

এদিকে বাড়ছে সুরমা নদীর পানি। ফলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেটে। তাই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান করছেন সিলেটে। তারাও শঙ্কিত টানা এ বৃষ্টি নিয়ে।

২১ জুন ১৯০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে পাঁচ-ছয়টি কেন্দ্রে সোমবার পানি ঢুকে পড়ে। কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় আরও কয়েকটি কেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

দুপুরে সিলেট নগরের ভার্তখলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নছিবা খাতুন উচ্চবালিকা বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলো শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কুমারগাঁও এলাকার মইয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। এ তিনটি বিদ্যালয়কেই সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী। কাউন্সিলর পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও আছে।

সিলেটে ১৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি নগরের ৩৫ নং ওয়ার্ডের সৈয়দ জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। গত ১৪ জুনের টানা বৃষ্টিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। যদিও কয়েক ঘণ্টার পরই এই পানি নেমে গেছে।

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভারী বৃষ্টিতে পানি উঠে যেতে পারে। কিছু বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।

নগরের ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগই নিম্নাঞ্চল। কিন্তু ১৫ টি ওয়ার্ডে ভোটের আমেজ বেশি। কেন না প্রথমবারের মতো ভোটাররা তাদেরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের। এখন শঙ্কা বন্যার। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ম্লান করেছে এইসব এলাকার ভোট উৎসব।

নগরের ৩৮ নং ওয়ার্ডের নয়া খুরুমখলা, পীরপুর, তালুকদারপাড়া, মইয়ারচর, টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর এলাকার সাতজন ভোটার বলেন, আমরা উন্নয়ন বঞ্চিত। সিটি করপোরেশনের সবধরনের কর আমরা পরিশোধ করছি। বিনিময়ে কোনো উন্নয়ন পাইনি। এবার আমাদের সুযোগ এসেছে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার। স্বপ্ন দেখছি অবহেলিত এ অঞ্চল আলোকিত করার। কিন্তু কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ভোট দেওয়া নিয়েও মনে শঙ্কা কাজ করছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। সোমবার (১৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৬ সেন্টিমিটার।

সুরমা নদীর সিলেট সদর পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড হয়েছে ১০.৩৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টের বিপৎসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সেন্টিমিটার।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের  , সিলেটে টানা পাঁচ-ছয়দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কয়েকটি কেন্দ্রের মাঠে পানি উঠেছে। তবে কোনো কেন্দ্রের ভেতরে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি। আজও আমাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা সবগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব কেন্দ্রের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে সেখানে বালি ফেলে ভোটারদের দাঁড়ানোর উপযোগী করতে সিটি করপোরেশনকে বলেছি। তারা এ বিষয়ে কাজ করবেন। এছাড়া আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় শেষ। মঙ্গলবার (২০ জুন) বেলা ১১টা থেকে আবুল মাল আবদুল মুহিত কমপ্লেক্স থেকে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হবে। আর সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ আজকেই শেষ হবে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ১১১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন, মঙ্গলবার ও বুধবার সিলেটে বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.