ঋণগ্রস্থ আরএসআরএম এর ব্যবসা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন
শাহ আলম নূর : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোটি কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝায় জর্জরিত রতনপুর গ্রুপের মালিকানাধীন চট্টগ্রাম-ভিত্তিক কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) লিমিটেডের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঋণ ও কার্যকরী মূলধনের অভাবে গত আড়াই বছর ধরে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরএসআরএমের দুটি স্টিল প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে।
দশটি ব্যাংক থেকে নেওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপির অভিযোগে গ্রুপটির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সংখ্যা এখন ৩০টিতে দাঁড়িয়েছে।
কোম্পানি কয়েক বছর ধরে লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় এবং কোম্পানির দুটি কারখানা পুনরায় চালু করা আজও অনিশ্চিত থাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত রিটার্ন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির ব্যবসা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে চায় কমিশন। কমিশন একটি বিশেষ নিরীক্ষকের মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক পর্যালোচনা করতে চায়।
এ ছাড়া কোম্পানির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে কতজন পরিচালক মনোনীত হবেন তা এখনও ঠিক করা হয়নি।
এর আগে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমান, এবং অন্য দুই পরিচালক – তার ছেলে মিজানুর রহমান এবং তার স্ত্রী শামসুন নাহার রহমান – কারখানাগুলি পুনরায় চালু করতে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় এখনো কারখানাগুলো চালু করতে পারেনি।
মাকসুদুর রহমান ২০২০ সাল পর্যন্ত এসবিএসি ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন এবং তার ছেলে মিজানুর রহমান এবং স্ত্রী শামসুন নাহার রহমান ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ছিলেন।
ব্যাংক ও আদালতের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি রতনপুর গ্রুপের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে ট্রাস্ট ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক আরও দুটি মামলা করেছে।
১৮৮ কোটি টাকা আদায়ের জন্য ১১ এপ্রিল রতনপুর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মডার্ন স্টিলের বিরুদ্ধে ট্রাস্ট ব্যাংকের সিডিএ শাখা মামলা করে। ওই মামলায় গত ১৬ জুলাই কোম্পানির তিন পরিচালককে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত।
এর আগে ২৩ মার্চ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা রতনপুর গ্রুপের আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রতনপুর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকা উদ্ধারের জন্য একটি মামলা করে। আদালত পরিচালকদের তলব করেন।
রতনপুর গ্রুপ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প সংগঠন। এটি বেশিরভাগই তার ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আরএসআরএম এর জন্য পরিচিত। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত, প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন কর্মী উৎপাদনে নিয়োজিত ছিল। এসময় কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
কিন্তু ১২ ডিসেম্বর ২০২০ সালে এ গ্রুপের দুটি ইস্পাত কারখানা দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া এবং কার্যকরী মূলধনের অভাবের কারণে রড উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
রতনপুর গ্রুপের কাছে জনতা ব্যাংকের কাছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের কাছে ৬৫০ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে ১৫০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৮০ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের কাছে ১৮৮ কোটি টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের কাছে ৫৫ কোটি টাকা এবং প্রাইম ফাইন্যান্সের কাছে ২৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
ব্যাংকগুলোর দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় রতনপুর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাকসুদুর রহমান, চেয়ারম্যান শামসুন নাহার রহমান, এমডির ভাই ইউনুস ভাইয়া, দুই ছেলে মিজানুর রহমান ও মারজানুর রহমান এবং মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।