মন্দার আশঙ্কায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারে গত সপ্তাহে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ সময় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে আবার কিছু পণ্যের কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান অনিশ্চয়তার কারণেই মূলত বাজারে এমন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। খবর আনাদোলু এজেন্সি।
বিশ্ব অর্থনীতি সম্ভাব্য মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। আর অর্থনৈতিক মন্দা মানেই হলো বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কমে যাওয়া। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে বেকারত্ব। সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় কমিয়ে আনে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় পণ্যবাজার।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক কোন দিকে মোড় নিতে পারে তা বিশ্লেষণ করছেন বিনিয়োগকারীরা। পণ্যবাজারে বিনিয়োগে তারা বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এ কারণেই মূলত কিছু পণ্যের দাম বাড়তি আবার কিছু পণ্যের দাম কমছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আগামীতে সুদহার আরো বাড়াবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশ্ববাজারে এখন আলোচিত খবর সম্ভাব্য মন্দা। যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, জুলাইয়ে এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি দশমিক ২ এবং এক বছরের ব্যবধানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ আশঙ্কার চেয়ে কম বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। অন্যদিকে উৎপাদক মূল্য বেড়ে আশঙ্কাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এক মাসের ব্যবধানে এটি দশমিক ৩ এবং এক বছরের ব্যবধানে দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদক মূল্যবৃদ্ধির অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রে এখনো মূল্যস্ফীতির বাড়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। ফলে ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার আরো বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, চীনের অর্থনীতিও আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারকে চাপের মুখে রেখেছে। দেশটিতে উৎপাদক মূল্য দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালের পর এবারই প্রথম উভয় সূচক একসঙ্গে কমল। ফলে মুদ্রা সংকোচন ও মন্দার আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে মূল্যবান ধাতুগুলোর মধ্যে স্বর্ণের দাম কমলেও বেড়েছে প্যালাডিয়ামের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ৫, রুপা ৪ ও প্লাটিনাম ১ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। তবে প্যালাডিয়ামের দাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে অস্থিরতার কারণে ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় স্বর্ণের দরপতন ঘটেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে প্যালাডিয়ামের বাজারদর।
এদিকে জ্বালানি পণ্যগুলোর মধ্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পণ্যটির দাম বাড়তি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্রেন্টের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৮২ ডলার ৬২ সেন্টে উন্নীত হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিকারক। কর্মীদের মাঝে অসন্তোষের কারণে দেশটির বেশ কয়েকটি গ্যাস প্লান্টে উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। এ কারণেই জ্বালানিটির দাম বেড়েছে।
এদিকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেইজ মেটালের বাজার নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তামার দাম ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এছাড়া অ্যালুমিনিয়ামের দাম দশমিক ৮, সিসা দশমিক ৭, নিকেল ৪ দশমিক ২ ও দস্তার ৩ শতাংশ কমেছে।
কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যেও গত সপ্তাহে উত্থান-পতন লক্ষ করা গেছে। গমের দাম ৩ দশমিক ২, চাল দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম ২ শতাংশ কমেছে। তুলার দাম ৪ দশমিক ২, চিনি ২ দশমিক ৯, কফি ২ দশমিক ৬ ও কোকোর ৪ শতাংশ বেড়েছে।