আজ: শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৭ অগাস্ট ২০২৩, রবিবার |


kidarkar

ভোলায় গ্যাসের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে ইন্ট্রাকো


নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোলার গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে শিল্প-প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো। এতে ভোলা গ্যাসের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।

সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলা থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহণ করে শিল্প-কারখানায় সরবরাহের প্রস্তুতি চলছে।

এবিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি মধ্যে ভোলা জেলায় প্রাপ্ত
গ্যাস সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য উভয়পক্ষের মধ্যে এক সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি সূত্রে জানা গেছে, ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকায় কিনে তা ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করবে।

তথ্য অনুসারে, প্রথম ধাপে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে দৈনিক পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এক বছরের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। মূলত সংকুচিত করার ফলে গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে জমা করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় গ্যাসকে তরলীকরণ করে তা পরিবহন করা হবে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলা থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে শিল্প-কারখানায় সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরাসরি সিএনজি করে গ্যাস নিয়ে যাওয়া।

সিএনজি আকারে এই গ্যাস এনে শিল্পে দেওয়া গেলে তা শিল্প খাতে বড় ভূমিকা রাখবে।পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন ‘ইন্ট্রাকো কম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনতে কাজ করছে। আগামী সেপ্টম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনার কাজ শুরু হবে।’

ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের কম্পানি সচিব সালাউদ্দিন বলেন, ‘সেপ্টেম্বরকে টার্গেট রেখেই দিন-রাতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই ভোলার গ্যাস সিএনজি করে নিয়ে সরবরাহ করা যাবে।

শিল্প-কারখানায় বর্তমানে পাইপলাইন থেকে প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাস পায় ৩০ টাকায়। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস বিক্রি হয় ৪৩ টাকায়। প্রস্তাব অনুসারে, ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারে করে কারখানায় পৌঁছে দেওয়া হবে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে নিয়ে আসতে এবং শিল্প এলাকায় সরবরাহ করতে অত্যধিক খরচ হবে, সেটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে।

তবে শিল্প বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা গ্যাসের মূল্য বেশি পরিশোধে আগ্রহী হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে জ্বালানি বিভাগ। সে ক্ষেত্রে খরচের বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ার চেয়ে কত দ্রুত এই গ্যাস নিয়ে আসা যায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পেট্রোবাংলা।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভোলায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। কিন্তু সঞ্চালন লাইন না থাকায় তা জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প উপায়ে গ্যাস শিল্পে দেওয়া হবে।’

ভোলায় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি (বাপেক্স)। বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে তা সরবরাহ করে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।

১৯৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাপেক্স। একই সংস্থা ২০১৮ সালে আবিষ্কার করে ভোলার দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ। শাহবাজপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয় ২০০৯ সালে। আর ভোলা নর্থ থেকে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। দুটি গ্যাসক্ষেত্রে এখন দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পেট্রোবাংলা।

চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম ভোলার ইলিশা-১ কূপ খনন করে গ্যাস পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই কূপে ১৮০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। নতুন কূপ খননের পর মজুদ আরো বাড়তে পারে। চাহিদা না থাকায় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে না।

ইতিমধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ যেমন ১১ টি কম্প্রেসর বসানোর বেইজ, স্টিল স্ট্রাকচার, বিদ্যুৎ, সড়ক তৈরী ইত্যাদি কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে কম্প্রেসর সংস্থাপন ও গ্যাস সংযোগের কাজ। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন আগামি মাসেই ভোলা থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও আশেপাশের তিতাস গ্যাসের বাণিজ্যিক গ্রাহকদের গ্যাস ঘাটতি পূরণে ভারচুয়াল পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সররাহ করা হবে যাতে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করতে পারে।

সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন ইন্ট্রাকো গ্যাস সরবরাহের কাজের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষের দিকে এবং পুরোদমে গ্যাস সংযোগের কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে আগামি মাসেই গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে পারবে।

অন্যদিকে ইতোমধ্যে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের অধীনে “ইন্ট্রাকো সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ড্রাস্টিজের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে যে তাদের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সিলিন্ডার সরবরাহরে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অচিরেই কারখানা হতে সিলিন্ডার সরবরাহ শুরু হবে।


৫ উত্তর “ভোলায় গ্যাসের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে ইন্ট্রাকো”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.