বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমলেও আভাস নেই দেশে!
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সোনা। ভালো মানের এক ভরি সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। দেশের বাজারে সোনার রেকর্ড দাম হলেও বিশ্ববাজারে কমেছে দামি এই ধাতুটির দাম। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে সোনার দাম এক শতাংশের বেশি কমেছে।
ফলে দেশের বাজার ও বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারের সোনার দামের তুলনায় দেশের বাজারে এক ভরি সোনা ১৪ হাজার টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, টানা দুই সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫৩ ডলার কমে যায়। এরপর আগস্টের শেষদিকে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২৫ ডলার বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে গত ২৪ আগস্ট দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। অবশ্য স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় বাজুস।
এ দফায় সব থেকে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার টাকার ওপরে বাড়ানো হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে ওঠে সোনা। বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা এক লাখ এক হাজার ২৪৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ৯৬ হাজার ৬৩৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ৮২ হাজার ৮১৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা ৬৯ হাজার ৫১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ২৫ আগস্ট থেকে ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ২২২ টাকা বাড়ানো হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের ২ হাজার ৪১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক হাজার ৭৪৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫১৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
অবশ্য সোনার গয়না কিনতে বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ভ্যাট দিতে হয় ৫ শতাংশ। আর ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে বর্তমান দাম অনুযায়ী, ভালো মানের এক ভরি সোনার গয়ন কিনতে ক্রেতাদের এক লাখ ৯ হাজার ৮০৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এদিকে, বিশ্ববাজারে গত এক সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ১৯ দশমিক ৯৭ ডলার বা এক দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯১৮ দশমিক ৯০ ডলার। বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনা যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি ডলার ১১০ টাকা করে ধরলে এক ভরির দাম দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ৮৪৩ টাকা। এ হিসাবে বিশ্ববাজারের তুলনায় দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনা ১৪ হাজার ৩৮০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্ববাজার ও দেশের বাজারে সোনার দামের এ ব্যবধানের কারণ জানতে চাইলে সম্প্রতি বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ গণমাধ্যম বলেন, ‘সোনা এখন আমদানি হয় না। আমরা রিসাইক্লিং করে যে সোনা পাই এবং হোলসেল মার্কেট থেকে কিনি। এরপর নামমাত্র মুনাফা ধরে দাম নির্ধারণ করা হয়। তাতে আমাদের তেমন কিছুই (লাভ) থাকে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও সোনার দুইটি টুকরো আনা যেত ৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিয়ে। এখন একটা টুকরো মানে ১০ ভরি সোনা আনতে ৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। দেশের বাজারে সোনার যে চাহিদা সেই অনুপাতেও আমদানি নেই। এসব কারণেই আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশের বাজারে সোনার দামে কিছুটা ব্যবধান রয়েছে।