আজ: সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩ইং, ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার |


kidarkar

ফিলিপাইনে চালের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্বজুড়ে সংকটের শঙ্কা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৈশ্বিক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে ফিলিপাইনে চালের দাম বৃদ্ধির ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য প্রধান খাদ্য আমদানিকারকদের জন্য সতর্কতা সংকেত হতে পারে। কারণে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকাজুড়ে এই খাদ্যশস্যের দাম ইতিমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পর ফিলিপাইনে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে চালের মূল্যস্ফীতি প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে গত আগস্টে। যা দেশটির ২০১৮ সালের স্মৃতিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনছে; ওই সময় ফিলিপাইনের সরকার চাল আমদানির ওপর দুই দশকের পুরোনো বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়।

চলতি সপ্তাহে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, প্রয়োজনে আর্থিক নীতিমালা আবারও কঠোর করা হবে। অন্যান্য দেশ চালের সরবরাহ সুরক্ষিত করার জন্য কূটনীতি এবং চুক্তিকে যখন প্রাধান্য দিচ্ছে, তখন ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক নীতি কঠোর করার কথা ভাবছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতিবিদ শার্লি মুস্তফা বলেন, ‘আমরা প্রচুর অনিশ্চয়তা দেখছি। নিষেধাজ্ঞার কারণে দাম বৃদ্ধির জন্য আরও চাপ তৈরি হচ্ছে।’

ভারত চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বৈশ্বিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। যে কারণে চালের আমদানিকারকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এবং সরবরাহ সুরক্ষিত করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার কোটি কোটি মানুষের প্রধান এই খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলমান এই পরিস্থিতিতে ম্যানিলা চালের দাম নতুন করে নির্ধারণ করে দিয়েছে। চালের সাম্প্রতিক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে প্রশ্ন ওঠার পর ফিলিপাইনের ফিন্যান্স আন্ডার সেক্রেটারি সিলো ম্যাগনো বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে চালের খুচরা মূল্য উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পর দেশটির সরকার নতুন মূল্যসীমা আরোপ করে।

চালের সরবরাহ সুরক্ষা বর্তমানে অনেক ভোক্তার এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ও ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন জাকার্তায় আসিয়ানের সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের মাঝে পাঁচ বছর মেয়াদের একটি চুক্তির পরিকল্পনা করা হয়। ভারতের সাথে কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে সেনেগাল। চালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে গিনি, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশও একই পথে হাঁটছে।

গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো কম্বোডিয়ার সাথে একটি সরবরাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। বছরে আড়াই লাখ টনের বেশি চাল সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে এই চুক্তির পরিকল্পনা করা হয়েছে; যা ২০১২ সালে স্বাক্ষরিত একই ধরনের একটি চুক্তির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

জাকার্তা ইতিমধ্যে এই বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে লাখ লাখ দরিদ্র পরিবারকে প্রতি মাসে ১০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যান্য দেশও চালের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। মালয়েশিয়া ইতিমধ্যে ক্রেতাদের চালের ক্রয় সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, স্থানীয় চালকে আমদানি করা হিসেবে উল্লেখ করে বাজারে উচ্চ দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠার পর পাইকারি বিক্রেতা ও বাণিজ্যিক চাল উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে নজরদারি শুরু করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

চালের অভ্যন্তরীণ মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও চাল নিয়ে গুজব মোকাবিলায় মিয়ানমারও মজুত করা চালের পরিমাণ রেকর্ড করার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছে।

এশিয়ার চালের বেঞ্চমার্কে উত্থান-পতনের পর চলতি সপ্তাহে এর কিছুটা উত্তাপ বাজারে দেখা গেছে। বর্তমানে চালের দাম ২০০৮ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের সময়ের সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ।


আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.