এনবিআরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি
বিদেশি ঋণের সুদের ওপর করারোপে বাড়াবে ব্যবসার ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক :চার দশকেরও বেশি সময় আগে বিদেশী ঋণের সুদে উৎসে কর অব্যাহতির সুবিধা দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর আইন ২০২৩-এর মাধ্যমে এ সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সংস্থাটি। ফলে এখন থেকে বিদেশী ঋণের সুদে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে। তবে বাড়তি এ করের কারণে বিদেশী ঋণ নেয়া প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়বে এবং এতে ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘উইথহোল্ডিং ট্যাক্স’ আরোপ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, দেশের তৈরি পোশাক খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উৎপাদনমুখী শিল্প, নির্মাণ খাত, ট্রেড অ্যান্ড কমার্স, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ও যোগাযোগ এবং সেবা খাতের কোম্পানিগুলোর বিদেশী ঋণ রয়েছে। এসব খাতের অনেক কোম্পানিই দেশের পুঁজিবাজারে তালিতাভুক্ত। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ব্যয়বৃদ্ধির চাপে কোম্পানিগুলোর আয় এমনিতেই নিম্নমুখী। তাছাড়া মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিরতার কারণে এরই মধ্যে বিদেশী ঋণের বিপরীতে খরচ বেড়েছে। তার ওপর নতুন করে বিদেশী ঋণের সুদের ওপর উৎসে কর যোগ হওয়ায় এ খাতে খরচ আরো বাড়বে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও উৎসে করের বিষয়টি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৭৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারে। এর মধ্যে বাণিজ্য ঋণ (বায়ার্স ক্রেডিট, বিলম্বিত দায় ও বিদেশী ব্যাক টু ব্যাক এলসি) ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৯০ হাজার ডলার, সরাসরি ঋণ ৫০২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার এবং অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি দায়ের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
অন্যদিকে ২০২১ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮৮ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১৯ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলারে। এর মধ্যে মেয়াদি ঋণ ৮০১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, বাণিজ্য ঋণ ১৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এবং সিকিউরিটিজ ২ কোটি ৬০ হাজার ডলার।
পাঠানো একটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনবিআরকে বলেছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর ১১৯ ধারা ও উৎসে কর বিধিমালার ৫ ধারায় যেকোনো অনিবাসী ব্যক্তিকে সুদ দেয়ার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ উৎসে করের বিধান করা হয়েছে, যা ১৯৭৬ সালে এক এসআরও এর মাধ্যমে অব্যাহতি দিয়েছিল এনবিআর। এ বছর অন্য এক এসআরও এর মাধ্যমে ১৯৭৬ সালের ওই এসআরও প্রত্যাহার করে সংস্থাটি।
এর ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট ও কাউন্টারপার্ট থেকে বায়ার্স ক্রেডিটের বিদেশী ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে এখন থেকে ২০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ট্যাক্স ক্রেডিট সুবিধার অনুপস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ঋণগ্রহীতার ওপরই উৎসে করের চাপ পড়বে। গ্রস-আপ ভিত্তিতে হিসাব করা হলে করহার কার্যত ২৫ শতাংশ বাড়বে। ফলে বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধে খরচও এক-চতুর্থাংশ বাড়বে। ঋণের সুদে বাড়তি এ খরচ এবং বিনিময় হারের ঝুঁকির কারণে ঋণগ্রহীতারা এই ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হবে। ফলে টাকার তারল্য এবং বিনিময় হারের ওপর আরো চাপ তৈরি হবে।
সম্প্রতি এনবিআরকে দেয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বিদেশী ঋণের সুদের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
Undeniably the best to prove real patriot. Go ahead