আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

অবৈধ অর্থ বৈধ করতে মায়ের নাম ব্যবহার কাম্য নয় : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশিদের পাঁচ বছরের সাজা বহালের রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, বজলুর রশিদের মাতা নূরজাহান বেওয়ার কোনো আয় ছিল না। ছিল না কোনো আয়কর নথিও। যে দলিলগুলো দ্বারা তিনি সম্পদের মালিক হয়েছেন সেসময় তার আয় না থাকায় প্রশ্ন আসে ওই সম্পত্তি তিনি কীভাবে ক্রয় করলেন?

আদালত বলেন, প্রকৃতপক্ষে বজলুর রশিদ তার অবৈধ পন্থায় অর্জিত টাকা দিয়ে ওই দলিলগুলোর মাধ্যমে মায়ের নামে সম্পত্তি ক্রয় করেন। পরে সেসব সম্পত্তি নিজের নামে হেবা মূলে গ্রহণ করেছেন আপিলকারী। আপিলকারীর এমন কর্ম নীতি-নৈতিকতারও পরিপন্থি। কারণ অবৈধ অর্থ বৈধ করতে তিনি গর্ভধারিণী মায়ের নাম ব্যবহার করেছেন, যা একজন সন্তানের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বজলুর রশিদের সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। গত ১৮ জুন হাইকোর্টের দেওয়া এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশিদ তিন কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ‘রূপায়ণ স্বপ্ন নিলয়’-এ ক্রয় করা ওই ফ্ল্যাটের আয়তন ছিল তিন হাজার বর্গফুট। একজন সরকারি চাকরিজীবী কীভাবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে এ ধরনের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, বজলুর রশিদ পৈত্রিক সূত্রে কোনো সম্পত্তি পাননি। তার আয়ের একমাত্র বৈধ উৎস ছিল সরকারি চাকরি। ২১ বছর চাকরি করে তা থেকে প্রাপ্ত বেতন থেকে পারিবারিক ব্যয় মিটিয়ে কোটি কোটি টাকা নগদ জমা রাখার বিষয়টি অবাস্তব, অবিশ্বাস্য ও কল্প কাহিনীকেও হার মানায়।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় মো. বজলুর রশিদকে গত বছরের ২৩ অক্টোবর পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং তিন কোটি ১৫ লাখ টাকায় ক্রয় করা ফ্ল্যাটটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ওই কারা কর্মকর্তা। ওই আপিল খারিজ করে বিশেষ জজ আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখেন  হাইকোর্ট।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আপিলকারী বজলুর রশিদ তার লিখিত ও মৌখিক সাক্ষীর কোথাও ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য ঋণের আবেদন করেছেন– এমন তথ্য প্রদান করেননি। বরং জেরায় তিনি বলেছেন, আমি রূপায়ণ হাউজিং লিমিটেডকে নগদ টাকা দিয়েছি। অথচ তিনি জবানবন্দিতে বলেছেন, ব্যাংক ঋণ ছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারবেন না। অথচ ব্যাংক ঋণের জন্য তিনি কোনো দরখাস্তই করেননি। অর্থাৎ আপিলকারী অপরাধের দায় থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য আদালতে একের পর এক মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করেছেন।

হাইকোর্ট বলেছেন, কোনো ক্রেতা ফ্ল্যাট নির্মাণ কোম্পানিকে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফ্ল্যাটের মূল্য বা কিস্তি পরিশোধ করেন। আপিলকারী স্বীকারও করেছেন তার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অথচ তিনি কোটি কোটি টাকা ব্যাংক চেকে বা পে-অর্ডারে প্রদান না করে কেন নগদে পরিশোধ করলেন? এর একটাই উত্তর, তা হলো ওই টাকা বৈধ না হওয়ায় তিনি ব্যাংকে রাখতে পারেননি।

রায়ে বলা হয়েছে, দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় আসামিকে দণ্ড ও জরিমানা করেছেন বিশেষ জজ আদালত। এ রায় ও দণ্ডাদেশ সঠিক ও আইনানুগ হয়েছে। তবে আপিলকারীকে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পরিবর্তে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া আইনগতভাবে সঠিক হয়নি বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, দণ্ডাদেশ সংশোধন করে তথা সশ্রম কারাদণ্ডের পরিবর্তে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এবং আপিলকারীর পক্ষে মো. মাসুদ-উল হক ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির শুনানি করেন।

প্রসঙ্গত, তিন কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বজলুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.