রেমিট্যান্স ঠিকমতো এলেই অর্থনীতির সমস্যা কেটে যাবে: অর্থমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশিদের বিদেশে যাওয়ার হার বাড়লেও দেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ক্রমেই কমছে। আগস্টে গত ছয়মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তাও আশানুরূপ নয়। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। তলানিতে নামছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে জিডিপিতেও, যা নিয়ে ‘চিন্তিত’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও।
মন্ত্রীর ভাষ্য, বিদেশ যাচ্ছে তো বহু মানুষ। তারা সেভাবে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে না। যেভাবে রেমিট্যান্স আগে আসতো, এখন তার চেয়েও বেশি আসার কথা। অথচ ধীরে ধীরে তা কমে যাচ্ছে। এটার চিন্তার বিষয়, খতিয়ে দেখার বিষয়। কেন এমনটা হচ্ছে, সেটাই এখন খুঁজছি আমরা।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী ‘পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল সামিটে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে এ সামিটের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী- গত আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, যা তার আগের ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।
তরুণ-যুবকরা দেশকে ভালোবাসেন, তারা বৈধপথেই রেমিট্যান্স পাঠাবেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি- তরুণরা অনেক সচেতন। অনেক তরুণ-যুবক স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হচ্ছেন। তাদের পরিবার দেশে। তাদের জন্য তো তারা অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। শ্রমিকরাও বৈধপথে বিদেশ যাচ্ছেন। রেমিট্যান্স আসার অনুপাত তো বিদেশে যাওয়া মানুষের যে হার, তার সঙ্গে মেলে না।
রেমিট্যান্স ঠিক তো, অর্থনীতিও ঠিক— এমন মন্তব্য করে মুস্তফা কামাল বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে হবে, খতিয়ে দেখতে হবে। বছরের শুরুর দিকে যেভাবে আসছিল, সেটা হঠাৎ কমতে শুরু করলো কেন? দ্রুত রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সমাধানের পথ বের করতেই হবে।’
রেমিট্যান্স কাঠামো সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞর কাছে আমরা চমৎকার কিছু উদ্ভাবনী পরামর্শ চাই। আপনারা রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখতে সংস্কারের প্রস্তাব দেন, আমাদের ভালো ভালো পরামর্শ দেন; আমরা তা গ্রহণ করবো এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।
জিডিপি ধারা অব্যাহত রাখতেও সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জিডিপি তো বেশ ভালো। করোনার মধ্যেও আমরা জিডিপি ধরে রাখতে পেরেছি। শুধু বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে, এটাকে (জিডিপি) কীভাবে আরও টেকসই করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের গভর্ন্যান্স গ্লোবাল প্র্যাকটিসের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্র্যাকটিস ম্যানেজার হিশাম ওয়েলি বলেন, ‘সত্যিই বাংলাদেশ ভালো করছে। সম্প্রতি সর্বজনীন পেনশন স্কিমটা আমি দেখেছি, সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি আমরা। এ স্কিমের দিকে সরকারকে কঠোর নজর রাখতে হবে। এখানে নাগরিকদের সঞ্চয় করা অর্থ জমানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আরও কাজ করার আহ্বান জানাবো আমরা। ছিন্নমূল মানুষ, প্রত্যন্ত এলাকার জনগণ যেন শহরের মানুষের মতো সুযোগ-সুবিধা পান, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আর এটা বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। আশা করি- বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের দায়িত্বে থাকা চৌকস কর্মকর্তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেকও দিনব্যাপী এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গত এক দশকে অর্থনীতিতে অনেক উন্নতি করেছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসই দেখতে চায়। বাংলাদেশ সরকারকে সিনিয়র সিটিজেনের (বয়স্ক নাগরিক) সুরক্ষা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দারিদ্র্যোর হার আরও কমাতে হবে। অর্থপাচার ও সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এগিয়ে যেতে হবে।’
এদিকে, দিনব্যাপী এ কর্মশালা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায়। বেলা ১১টার দিকে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থপনা পুনর্গঠন বিষয়ে প্যানেল আলোচনা হয়। এতে আলোচক ছিলেন সাবেক পাঁচ অর্থসচিব। তারা হলেন- মো. জাকির আহমেদ খান, ড. মোহাম্মদ তারেক, মো. ফজলে কবির, মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, আব্দুর রউফ তালুকদার। পরে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকাসহ ব্যাংকে পাঠানোর যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার, তা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির পর কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতির চলমান ব্যবস্থা পুনর্গঠনসহ নানা বিষয়ে কয়েকটি সেশন পরিচালনা করা হয়। অর্থনীতিবিদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেশনগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করেন।