সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নেতিবাচক, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা!
নিজস্ব প্রতিবেদক : একসময় বেশি মুনাফার আশায় ব্যাংক আমানতের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল মানুষ। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সকল ধরণের সঞ্চয় শংসাপত্রের সুদের হার হ্রাস করা হয়েছিল। এরপর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ক্রমাগত কমছে। সেপ্টেম্বরেও সঞ্চয়পত্রে সরকারের নিট ঋণ (ঋণ) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
জানা যায়, সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। এর মধ্যে আগের মূল ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৯৩ কোটি ৬৪ টাকা। এরপর পর ওই মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও ভাঙানোর মধ্যকার ব্যবধানকে বোঝানো হয়। গত অর্থবছরে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছিল, ভাঙানোর পরিমাণ তার চেয়ে বেশি ছিল। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এদিকে মূল ও মুনাফা পরিশোধ করলেও এ খাতে সরকারের ঋণ রয়েছে।
সুদ ব্যয় কমাতে সঞ্চয়পত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়েছিলো সরকার। এর ফলে খাতটিতে বিনিয়োগ নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। এছাড়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি পূরণে সরকার সঞ্চয়পত্রের নির্ভরতাও কমিয়ে ফেলেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি ২ লাখ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছিল সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি স্তর করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এর পর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে থাকে। বিনিয়োগ কমার আরও কারণ রয়েছে। যেমন ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রত্যেক গ্রাহককে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার ব্যাংক হিসাবে জমা টাকা ১০ লাখ অতিক্রম করলেও দিতে হয় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পান। কিন্তু এই বিক্রি সরকারের জন্য ঋণ। জনগণের কাছ থেকে এ ঋণ নেওয়ার বিপরীতে সরকারকে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়। এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮.৫৭ শতাংশ কম। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা।