আজ: শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ইং, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

মোবাইলে দিনে লেনদেন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে গড়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন (টাকা ঢুকেছে) ৩৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। ক্যাশ আউট (টাকা উত্তোলন) হয়েছে ২৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। এসময় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩০ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ৫২০ কোটি টাকা।

আলোচিত মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার তিন হাজার ২১৬ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটায় ৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। একই সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার তিন হাজার ২১৬ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

এক যুগ আগে যখন এই সেবা চালুর সময় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বাস্তবতা হলো- বিকাশ, রকেট, নগদের মতো এমএফএস সেবা এখন প্রতি মুহূর্তের আর্থিক প্রয়োজনে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই এখন নগদ অর্থের চাহিদা মেটাচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানান, হিসাব খুলতে কোনো টাকা লাগে না। শহর কিংবা গ্রামে নিমিষেই পাঠানো যায় অর্থ। কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, ঋণ গ্রহণসহ নতুন নতুন নানা পরিষেবা যুক্ত হচ্ছে। বিদেশ থেকে সহজে আসছে রেমিট্যান্স। মুহূর্তে সর্বত্র লেনদেনে গতিশীল করছে দেশের অর্থনীতি। এসব সুবিধার কারণে মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) ওপর মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি বাড়ছে নির্ভরশীলতা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ বিভিন্ন নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার জন। অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছেন। লেনদেনের সুবিধার্থে তারা একাধিক সিমে হিসাব খুলছেন। তাই দেশের জনগণের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেশি।

নিবন্ধিত এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১২ কোটি ৪২ লাখ ৯১ হাজার ও নারী ৯ কোটি ১ লাখ ৬৭ হাজার জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬টি। এখন গ্রাহক ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজে ঝামেলা ছাড়াই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার সুযোগ পাচ্ছেন।

২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপরই রয়েছে ‘নগদ’-এর অবস্থান।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এখন গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনে দিনে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রসঙ্গত, সুবিধার পাশাপাশি আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে মোবাইলভিত্তিক লেনদেনের ক্ষেত্রে। এটা বন্ধ করার জন্য কাজ করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। অনলাইন জুয়া, বৈদেশিক মুদ্রার অবৈধ লেনদেন এবং হুন্ডির সঙ্গে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়ার পর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ২১ হাজার ৭২৫টি মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে অবৈধ আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধে গঠিত সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

১ টি মতামত “মোবাইলে দিনে লেনদেন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.