আজ: শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ইং, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে তৃতীয় শিরোপার খোঁজে ভারত

স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুর বাজলেই ভেসে আসে অস্ট্রেলিয়ার জয়গানের উল্লাস। এই আসরের সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন তাসমান সাগরপাড়ের দেশটি। সবশেষ ২০১৫ সালে পঞ্চমবারের মত শিরোপা জিতেছিল রিকি পন্টিংয়ের উত্তরসূরীরা। এবার আরেকটি শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে উপস্থিত অজিরা। যে মঞ্চে তাদের প্রতিপক্ষ তৃতীয় শিরোপার খোঁজে থাকা স্বাগতিক ভারত।

ভারতে দীপাবলির ছুটি শেষ হওয়ার পথে। তবে এই উৎসব শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি উৎসবের দেড়গোড়ায় দেড়শ কোটি মানুষ। যে উৎসবকে কেন্দ্র করে সেজেছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাঠ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। আহমেদাবাদে সাবারমাতি নদীর তীরে সেই উচ্ছ্বাসের ঢেউ এখন গোটা ভারতে বয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাতেই আজ বেলা দুপুর আড়াইটায় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে মাঠে নামবে উৎসবের অপেক্ষায় থাকা ভারত।

ফাইনালের মঞ্চে ফেভারিট বলতে কিছু থাকে না। দীর্ঘ ৪৫ দিনের লড়াই শেষে দশটি দল থেকে দুটি দল যখন সোনালি ট্রফি ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়। তখন লড়াইটা হয়ে যায় দুর্মর। কেউ কাউকে নাহি ছাড়ি অবস্থা! তবে নিজেদের মাঠ বলে চূড়ান্ত হিসেবনিকেশ শেষে ভারতই খানিকটা এগিয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ম্যাচের আগের দিনই বলে দিয়েছেন, ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শকই গলা ফাটাবেন ভারতের পক্ষে। প্রতিপক্ষকে ভড়কে দিতে আর কী লাগে!

কিন্তু ফাইনালের দলটা অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের মঞ্চে এলেই যাদের ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য ঠিকরে বেরোয়। একবার জয়ের স্রোতে পড়ে গেলে সমুদ্র দখল না করে যে জোয়ার থামে না। গ্রুপ পর্বে সেটাই দেখালো প্যাট কামিন্সের দল। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের চিরায়ত রক্ত প্রবাহিত হয় তাদের শিরায়। কামিন্স সেটাই আওড়ে গেলেন, ‘দর্শক সমর্থন অবশ্যই ভীষণ রকমের একতরফা থাকবে। বিশাল সংখ্যক দর্শককে চুপ করিয়ে দিতে পারার চেয়ে তৃপ্তিদায়ক কিছু খেলাধুলায় আর নেই!’

শক্তিমত্তায় দুই প্রতিপক্ষের কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম পাঁচজনই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ২০০৭ বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন রোহিত, শুভমান গিল, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলিরা। নিজেদের ভূমিকা তারা পালন করে চলেছেন সুনিপুণভাবে। প্রতি ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন রোহিত, পরিস্থিতি বুঝে খেলছেন গিল। উত্তাল সমুদ্রে নির্ভীক নাবিক হয়ে আছেন কোহলি। আইয়ার ও রাহুল ঝড় তুলছেন শেষের দিকটায়।

বোলিংয়ে জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ রান আটকাচ্ছেন, উইকেট তুলে নিচ্ছেন। মোহাম্মদ শামি এসে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষ শিবিরে ছড়াচ্ছেন আতঙ্ক। রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদিপ যাদব সুযোগ পেলেই দেখাচ্ছেন ঘূর্ণির মায়াবি জাদু। তাতে ফাঁদে পা দিয়ে আটকে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়াও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্নারের অভিজ্ঞতা ঠিকরে বেরুচ্ছে হিরের মতো। মিচেল মার্শ পেশী শক্তিতে ছয় আউন্সের চেরিটাকে চোখের পলকে আছড়ে ফেলছেন উত্তাল গ্যালারিতে। স্মিথ দেখাচ্ছেন নিজের অভিজ্ঞতা। মার্নাস লাবুশেন রান করে যাচ্ছেন বুঝেশুনে। ভারত যাকে থামানোর জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, সেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একবার দাঁড়িয়ে গেলে তার ব্যাটের বিষাক্ত আচড়ে নীল সমুদ্রে নীলাভ হয়ে উঠতে পারেন ভারতীয় দর্শকরা।

তবে ট্রফির স্বপ্নে বিভোর থাকা গোটা দেশের আঁচ যে গায়ে লাগছে, সেটা স্বীকার করলেন রোহিত। তাতে ভালো কিছু উপহার দিতে চান, ‘ইমোশনালি, অবশ্যই এটা বড় ব্যাপার, বড় উপলক্ষ্য। কোনো সংশয় নেই। যতটা কঠোর পরিশ্রম, যত স্বপ্ন, সব এই দিনকে ঘিরেই। কালকে সেই দিনটি আমাদের সামনে আসছে। তবে পেশাদার অ্যাথলেটদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জই তো এটা যে, কীভাবে সবকিছু এক পাশে সরিয়ে মূল কাজে মনোযোগ দিতে পারে। আমার সঙ্গে আরও ১০ ক্রিকেটার কাল তাই মাঠে নামবে নিজেদের কাজে মন দিতে, জীবনের সেরা মুহূর্ত হিসেবে তারা ভাববে না।’

কামিন্স অবশ্য নিজেদের অতীতের ধারাটা বজায় রাখতে চান। ২০১৫ বিশ্বকাপ, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এই বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী ক্রিকেটার এই দলের প্রায় সবাই। ফাইনালের আগের দিন সেটিই মনে করিয়ে দিলেন কামিন্স, ‘আমার মনে হয়, ম্যাচটিতে লড়াই হবে সমানে সমান। দুই দলের পক্ষেই নানা কিছু বলা যায়। ভালো ব্যাপার হলো, ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী দলের ৬-৭ জন ক্রিকেটার আছে এই দলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের আরও বেশি। ১৫ জনের ১২ জনই বোধহয় বিশ্বকাপ জিতেছে। এসব ম্যাচে কী করতে হয় তারা জানে।’

আজ ভারতের একাদশ অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। অস্ট্রেলিয়া দলে মার্নাস লাবুশেনের জায়গায় আসত পারেন মার্কাস স্টয়নিস। সবশেষ কিছু বিশ্বকাপের সমীকরণ মানলে, শিরোপার ফয়সালা হতে পারে টসেই। সবশেষ তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে যে পরে ব্যাট করা দল!

পরিসংখ্যানের লড়াইয়ে জয়ের পাল্লা হেলে পড়ে আসরের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার দিকে। একদিনের ম্যাচে দুই দল একে অন্যকে মোকাবেলা করেছে ১৫০বার। তাতে অজিদের ৮৩ জয়ের বিপরীতে ভারত জিতেছে ৫৭টিতে। বাকি ১০ ম্যাচে ফল হয়নি।

আবার এই ৫৭ জয়ের মধ্যে ৩৩ ম্যাচে ঘরের মাঠে জয় পেয়েছে ভারত। প্রতিপক্ষের মাঠে ১৪ ও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ১০ জয় আছে রোহিত শর্মার দলের। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মাটিতে জিতেছে ৩৮ ম্যাচ। ভারতের মাটিতে ৩৩ ম্যাচ জয়ের বিপরীতে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে জিতেছে ১২ ম্যাচ।

বিশ্বকাপে লড়াইয়ের হিসেব আসলেও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। তাতে অস্ট্রেলিয়ার ৮ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ৫টিতে।তবে শেষ দুটি ম্যাচ কথা বলছে ভারতের পক্ষে। ২০১৯ সালে ও চলতি আসরের গ্রুপ পর্বে অজিদের হারিয়েছে ভারত।

অতীত লড়াই, সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যানের খতিয়ানের হিসেব পেছনে ফেলে রোহিত শার্মারা এখন ছক কষছেন তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের। কামিন্সরাও ষষ্ঠ শিরোপা জেতার স্বপ্ন আঁকছেন হলদে রং তুলিতে। আহমেদাবাদের ১ লাখ ৩২ হাজারের নীল সমুদ্রে রোহিতদের বিজয় তরী ভেসে চলবে নাকি সাবারমাতি নদী পেরিয়ে আরব সমুদ্র হয়ে কামিন্সরা আরেকবার তাসমান পাড়ে তরী নোঙ্গর করবেন তা দেখার অপেক্ষায়।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.