আজ: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

১৪ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনিয়ম দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় ঋণ দিয়েছে, এখন ফেরত পাচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ফলে সেপ্টেম্বর শেষে দেশি-বিদেশি ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। ওই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়। ব্যাংকিংয়ের আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা সব ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অর্থ ও প্রতিবছরের মুনাফা থেকে এ মূলধন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। দেশে বর্তমানে মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়।

ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বা রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব ব্যাংক এ নীতিমালা অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে না, সেসব ব্যাংককে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলধন ঘাটতিতে থাকা সেসব ব্যাংক শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারে না।

ব্যাংকাররা বলছেন, বিভিন্ন কারণে ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী ঋণ মানের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন বাড়ছে; যা রাখতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে। প্রভিশন রাখতে গিয়ে মূলধনে টান দিচ্ছে। ফলে সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১৪টি। ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তিন মাস আগে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।

মূলধন ঘাটতি থাকা ব্যাংকগুলো হলো— রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী, বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক; বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক; বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ১২২ কোটি টাকা। সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৭১ কোটি টাকা, সিটিজেন ব্যাংকের ৯৫ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ হাজার ২৪ কোটি টাকা। সাবেক ফারমার্স বা বর্তমান পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি ৬০৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের চিত্র

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.