খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি হলে বীমা ব্যবসায় অযোগ্য হবে ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকাস্যুরেন্স বা ব্যাংকের বীমা ব্যবসার নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংক ৫ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি, তারা ব্যাংকাস্যুরেন্স বা বীমা ব্যবসায় অযোগ্য হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকের ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) সাড়ে ১২ শতাংশ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকাস্যুরেন্স (Bancassurance) প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৭(১)(ল) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনক্রমে সকল তফসিলি ব্যাংক বীমা কোম্পানির ‘কর্পোরেট এজেন্ট’ হিসেবে বীমা পণ্য বিপণন ও বিক্রয় ব্যবসা ১২ ডিসেম্বর থেকে করতে পারবে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স অর্থ ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানির মধ্যে একটি অংশীদারত্ব ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ব্যাংক তার গ্রাহকদের কাছে বীমাপণ্য বিপণন ও বিক্রি করতে পারবে। তবে, এজন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে কর্পোরেট এজেন্ট লাইসেন্স নিতে হবে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসা করতে হলে ব্যাংকের অবশ্যই ঝুঁকিবারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত বা ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) সাড়ে ১২ শতাংশ থাকতে হবে। ব্যাসেল–৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ক্রেডিট রেটিং গ্রেড ২ এর কম হলে বীমা ব্যবসা করতে পারবে না। এছাড়া, টানা তিন বছর মুনাফা করতে পরছে না, এমন ব্যাংক বীমা কোম্পানির এজেন্ট হওয়া বা ব্যবসা করতে পারবে না। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসায় অযোগ্য হবে। কোনো ব্যাংকে বীমা ব্যবসারা জন্য আগ্রহী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষ ও উপযুক্ত জনবলের প্রত্যয়ন থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৩৪টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি। এসব ব্যাংক বীমার কর্পোরেট গ্রাহক হতে বাদ পড়বে। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি এবং বিশেষায়িত দুটি ব্যাংক ঋণ খেলাপের কারণে গ্রাহক হতে পারবে না। অপরদিকে, ২৭টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের কম হওয়ায় গ্রাহক হতে পারবে। শর্ত অনুযায়ী শরিয়াভিত্তিক ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৭টি এবং বিদেশি ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৭টি ব্যাংকাস্যুরেন্স হওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। ধারাবাহিকভাবে তিন বছর মুনাফা করেছে, এমন ব্যাংকের সংখ্যাও কম।
নীতিমালা সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি সংশোধন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চুক্তি নবায়ন বা মেয়াদ বাড়ানোর জন্য হালনাগাদ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।
বীমার পলিসি হোল্ডারের পরিষেবা পেতে ধারাবাহিক সহযোগিতা করবে বীমা কোম্পানিগুলো। বীমার মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্য অর্থ যেন গ্রাহক তার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়টি ব্যাংককেই নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের অনুকূলে বীমা পলিসি নবায়নের কমিশন চলমান থাকবে।
এতে বলা হয়েছে, প্রতি তিন বছর পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি পর্যালোচনা করতে হবে। বিদ্যমান চুক্তির নবায়ন বা সংশোধন করা হলে ব্যাংকগুলোকে তা লিখিতভাবে নবায়ন বা সংশোধনের ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। ব্যাংক কোনোভাবেই বীমা গ্রাহককে অষ্পষ্ট তথ্য দিতে পারবে না। ব্যাংকাস্যুরেন্স ম্যানেজার বা দায়িত্বরত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের গ্রাহকের কাছে বীমাপণ্য বিক্রি করতে পারবে না। ব্যাংক বীমাকারীর বীমা সংক্রান্ত কোনো ঝুঁকি গ্রহণ করবে না এবং বীমাকারী হিসেবে কাজ করবে, তার স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। ব্যাংকের গ্রাহকরা নিজেদের হিসাব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিমার প্রিমিয়ামের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রধান বীমা কর্মকর্তাকে কমপক্ষে স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে। ব্যাংক অথবা বীমা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ব্যাংকাস্যুরেন্স ম্যানেজারকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। বীমার জন্য শাখা নেটওয়ার্ক, বিক্রয় নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল মাধ্যম বাধ্যকামূলকভাবে থাকতে হবে। এছাড়া, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কর্তৃক নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী বীমাকারী এবং ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কমিশন নির্ধারণ করবে।