আজ: বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫ইং, ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ মার্চ ২০২৪, বুধবার |

kidarkar

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে সরকার। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ ছিল ১২০ কোটি টাকা বেশি। তবে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখন ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল ৩ হাজার ১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে ব্যাংক ঋণের দিকে কিছুটা ঝুঁকছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ঘাটতি ৪০ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। আবার সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ না বেড়ে জানুয়ারি পর্যন্ত উল্টো ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা কমেছে। এর মধ্যে আবার ডলারের উচ্চদরের কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের খরচ অনেক বেড়েছে। আবার আশানুরূপ বিদেশি ঋণও আসছে না। ফলে অতি প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকারকে কিছু ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নেওয়া ঋণ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মোট ৪৫ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ৩৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এতে করে নিট ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংকে সরকারের ঋণ স্থিতি কমে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে অনেক প্রকল্পে কাটছাঁট করা হচ্ছে। সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ, নতুন গাড়ি বা স্থায়ী সম্পদ কেনার ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। টাকার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ৪২ হাজার কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে ২৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দিচ্ছে। এই বন্ড না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে দিলে তাতে মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়ত।

অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। ফলে সরকারের এ ঋণ মূল্যস্ফীতিতে অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে তেমন না। তবে ঋণ নেওয়া বাড়তে থাকলে বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্ত হবে। আবার মূল্যস্ফীতিতেও প্রভাব বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এখন সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি সুদে ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। বিল বন্ডের সুদ আয়ের বিপরীতে কোনো কর না কাটায় এখানে আকৃষ্ট হচ্ছেন অনেকে। তবে এতে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ ব্যয় প্রায় ৬০ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশে উঠেছে। গত বছরের একই মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে উঠেছে। গত বছরের একই মাসে গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। ট্রেজারি বিলের সুদহার বৃদ্ধির ফলে সরকারের পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার বাড়ছে। বর্তমানে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদের সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে সুদহার নির্ধারিত হয়। এ ব্যবস্থায় চলতি মাসের সুদহার উঠেছে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.