আজ: বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ইং, ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজারে ফিরছে বিনিয়োগকারী, চার দিনে ৪ হাজার বিও সক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন পতনের বৃত্তে আটকে থাকার পর জুলাই মাসের প্রথম কর্মদিবস থেকে দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাজারে গতি ফিরে আসায় আবার নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। চার দিনের ব্যবধানে ৪ হাজার নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। এসব বিনিয়োগকারীর শেয়ারশূন্য বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে গত চার দিনে শেয়ার কেনা হয়েছে।

ফলে বাজারে একদিকে কমছে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব, অন্যদিকে বাড়ছে শেয়ার আছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা। পুঁজিবাজারে বিও হিসাব সংরক্ষণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজারে কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে চাইলে তাঁর বিও হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। বিও হিসাবের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিও হিসাবের পরিসংখ্যান থেকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের তথ্য জানা যায়।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিও হিসাবে শেয়ার না থাকা মানে ওই বিও হিসাব নিষ্ক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর যেসব বিও হিসাবে শেয়ার থাকে, সেগুলোকে সক্রিয় বিও হিসাব বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

শেয়ারবাজারে নিয়মিত কেনাবেচার কারণে প্রতিদিনই সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের তারতম্য ঘটে। সাধারণত বাজারে যখন মন্দাভাব বা দরপতন দেখা দেয়, তখন নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন অনেক বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। আবার বাজারে যখন ঊর্ধ্বমুখী ভাব বা গতি সঞ্চার হয়, তখন নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা আবার সক্রিয় হতে শুরু করেন।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৬ হাজার ১৬৮টিতে। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে অর্থাৎ ৪ জুলাই এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ২ হাজার ৩৪৬। সেই হিসাবে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৮২২টি।

গত সপ্তাহ শেষে দেশের প্রধানপুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ বা ২৭৪ কোটি টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯ পয়েন্ট বেড়ে সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার লেনদেন ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকায় নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারে সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তাঁরা বলছেন, নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় হওয়ার প্রবণতাকে বাজারের জন্য ইতিবাচক । যত বেশি বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় থাকবেন, বাজার ততই গতিশীল হবে। তবে শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

অপর দিকে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার । সিডিবিএলের হিসাবে, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৭। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪১টিতে। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৩৬টি কমেছে।

শেয়ারশূন্য বিও হিসাব কমার পেছনে বাজারে নতুন তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া টেকনো ড্রাগসের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানান বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির আইপিও শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে যুক্ত হয়েছে। এ কারণে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমে গেছে। বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ আইপিও–নির্ভর হয়ে গেছে। সেকেন্ডারি বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দাভাব থাকায় কিছু লাভের আশায় বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই আইপিও শেয়ারে আবেদনে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে লটারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর প্রত্যেক আবেদনকারী আনুপাতিক হারে আইপিও শেয়ারের নিশ্চিত বরাদ্দ পান। আবার আইপিও শেয়ারে কমবেশি নিশ্চিত মুনাফারও নিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে আইপিওতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে টেকনো ড্রাগসের আইপিওতে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার রেকর্ড আবেদন জমা পড়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, আগামী রোববার থেকে টেকনো ড্রাগসের লেনদেন শুরু হবে শেয়ারবাজারে। তার আগে গত সপ্তাহে কোম্পানিটি আইপিও আবেদনকারীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন করেছে। কোম্পানিটির আইপিওতে যাঁরা সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন, তাঁরা পেয়েছেন ১১টি শেয়ার। সেই হিসাবে যাঁরা এক লাখ টাকার আবেদন করেছেন, তাঁরা পেয়েছেন ১১০টি শেয়ার। তবে আনুপাতিক হারে ভগ্নাংশের হিসাব থাকায় যাঁরা বেশি টাকার আবেদন করেছেন, তাঁরা কয়েকটি শেয়ার বেশি পেয়েছেন। এ কারণে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.