সামিট এলএনজি টার্মিনাল জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করতে প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামিট আনন্দের সাথে জানাচ্ছে যে, আজকে থেকে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কো. প্রা. লিমিটেড (এসএলএনজি) শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট (এমএমসিএফডি) রিগ্যাসিফিকেশনকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
বিদ্যুৎ, সার ও শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এফএসআরইউ-এর জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় সামিটের কর্মীরা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা জাতীয় গ্রিডে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ চালু করতে দিন-রাত কাজ করেছেন। তিন মাসের অধিক সময় আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিটের এফএসআরইউ যখন প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সেই সময় থেকে এফএসআরইউ-এর মেরামত সংক্রান্ত খরচ ও কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সামিটের প্রায় শতাধিক কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
পূর্বের ঘটনাঃ গত ২৩ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় রিমাল শুরুর সময় কৌশলগতভাবে সামিট এফএসআরইউ-এর শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিছুদিন পর ২৭ মে ২০২৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সর্বোচ্চ প্রভাবের সময় সাগরে ভাসতে থাকা কয়েকশ টন ওজনের একটি ভাঙ্গা পন্টুন বারবার আঘাত করলে সামিট এফএসআরইউ-এর ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার দ্বারা এফএফআরইউ-এর ক্ষতি নিরীক্ষার পর, এফএসআরইউটি ডিসকানেক্টেবল কোন এবং প্লাগসহ সিঙ্গাপুরে ড্রাই ডকিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মেরামত শেষে সিঙ্গাপুর থেকে গত ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে সামিটের এফএফআরইউ কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে পৌঁছায়। পরদিন সমুদ্রের তলদেশে ডিসকানেক্টেবল টারেট মুরিং (ডিটিএম) প্লাগ ও ল্যান্ডিং প্যাডের সঙ্গে এফএসআরইউ-এর নোঙ্গরকরণের প্রস্তুতির সময় আকস্মিকভাবে ডিটিএম বয়া মেসেঞ্জার লাইনে জটলা বেঁধে, মেসেঞ্জার লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সামিট নরওয়েভিত্তিক বিশ্বখ্যাত দুই মেরিটাইম প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাকগ্রেগর’ ও ‘ক্যান সিস্টেম’ এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘শেলফ সাবসি’কে নিযুক্ত করে যেন সামিট এফএসআরইউ-এর সমুদ্রের তলদেশে থাকা ল্যান্ডিং প্যাডের ডিটিএম প্লাগ ত্রুটিমুক্তি করে নিরাপদে মুরিং করতে পারে।
একই সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে গেল ৩৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে সাগরের পানিতে পলিমাটি বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্রের তলদেশে দৃশ্যমানতা প্রায় শূণ্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে সমুদ্রের গভীরে মেরামত কাজ এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ ডুবুরি এবং বিশ্বের অন্যতম দক্ষ ও শক্তিশালী ভেসেলও হিমশিম খেয়েছে।
জাতীয় গ্রিডের সাথে এফএসআরইউ পুনসংযোগ দিতে হলে ডিটিএম প্লাগটি ল্যান্ডিং প্যাডের (সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত) মধ্যবর্তী স্থানে পুনরায় স্থাপন করতে হয়। এজন্য “কোরাল” নামক অ্যাংকর হ্যান্ডেলিং টাগ (এএইচটি) প্রস্তুত করা হলেও সেটি ডিটিএম পুনঃস্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করতে পারেনি। এই ডিটিএম সরাতে আরও বেশি শক্তিশালী ও সক্ষম ক্রেন আনার জন্য সামিট ‘ওরিয়েন্টাল ড্রাগন’ নামে একটি ডাইভিং সাপোর্ট ভেহিকলের (ডিএসভি) সাথে চুক্তি করে। ওরিয়েন্টাল ড্রাগন আগস্ট, ২০২৪-এর শেষ নাগাদ ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায়। এর পর ওরিয়েন্টাল ড্রাগন সফলভাবে ৩৫ বার সমুদ্রে ডুব দেয় এবং গ্র্যাভিটি অ্যাংকর পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হয়। অবশেষে ১৩১ বার সমুদ্রে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্লান্তিকরভাবে ডুব দেওয়ার পর নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও সামিট এলএনজি টার্মিনালের দল সম্মিলিতভাবে টার্মিনালের সাব-সি অ্যাসেট স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন। সর্বশেষ আজ টার্মিনালটি কার্যকরভাবে হোল্ডব্যাক অ্যাংকরে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল এখন রিগ্যাসিফিকেশন ও শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।