আজ: সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ইং, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার |

kidarkar

বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত দুই মাস ধরে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে। তবে নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ) এখনো ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে (৪৮ বিলিয়ন) উঠেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত গ্রস (মোট) রিজার্ভ দুই হাজার ৪৯৭ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন এক হাজার ৯৮২ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন)। গত সপ্তাহে অর্থাৎ ২ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে।

গ্রস রিজার্ভ ও বিপিএম-৬ এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আছে এক হাজার ৪৭১ কোটি মার্কিন ডলার (১৪ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার)। প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের জন্য বেঁধে দেওয়া ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

দেশে চলমান সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার ঘোষণা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু চাহিদা ঠিক রাখতে গিয়ে প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে চলতি সেপ্টেম্বরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অনেকটা বন্ধ আছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি একটি প্রোগ্রামে বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে আমাদের সমস্যা হয়নি, আমরা ভাগ্যবান। চার-পাঁচটি পরিবার ব্যাংক থেকে দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসতে পারত, সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করলে ছয় মাস পর শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাবে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। তারও আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নজিরবিহীন অর্থপাচার ও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকার দর অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে।

তখন দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ সালের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি। প‌রে ২০২৩ সা‌লের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ।

এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং জুনে তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। সবমিলিয়ে তিন কিস্তিতে প্রায় দুই দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। ঋণচুক্তির চতুর্থ কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে।

বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের অন্যতম শর্ত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ সংরক্ষণ রাখতে হবে। সেই হিসেবে আইএমএফের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের জন্য বেঁধে দেওয়া ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।

এদিকে ব্যাংকখাত সংস্কার, অর্থপাচার প্রতিরোধ, কর ব্যবস্থাপনা, আয়কর ও ভ্যাট সংস্কারে নতুন করে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশকে নতুন করে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফ ইতিবাচক ভূমিকায় রয়েছে বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাড়ছে রেমিট্যান্স

গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে না বলে হুমকি দেন প্রবাসীরা। প্রতিবাদ হিসেবে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

নতুন সরকার গঠনের পর আবার দেশ গঠনে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। এর ফলে আবারও প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। আগস্ট মাসে দেশে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২২ কোটি মার্কিন ডলারে (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন)।

গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। কোনো একক মাসে এত প্রবাসী আয় গত চার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গত জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৪ কোটি ডলার এবং তারও আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯১ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.