খেলাপি ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ সুবিধা নিয়ে ব্যাপক ঋণ পুনঃতফসিলের ফলে কমেছে খেলাপি ঋণ। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। এ হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ৭ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা যা ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মূলত গত বছর বিশেষ সুবিধা নিয়ে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের ফলে এমন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যে মন্দমানে শ্রেণীকৃত রয়েছে ৩৯ হাজার ৪ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে যা ৪২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ছিল। সন্দেহজনক মানে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে পাঁচ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে যা পাঁচ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা ছিল। আর সাব স্ট্যান্ডার্ড বা নিন্মমানে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে যা ছিল দুই হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতদিন বেসিক ব্যাংককে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকের সঙ্গে হিসাব করত। এবারই প্রথম সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে বেসিককে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বর শেষে বিশেষায়িত খাতের বেসিক ও রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। হার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে বেসিক ছাড়া অন্য চারটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা যা তাদের মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
ডিসেম্বরে এসে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গিয়ে ঠেকেছে ৬ হাজার ৩১০ কোটি টাকা যা ৫৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে ছিল ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা যা ছিল ৫৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২২৪ কোটি টাকা যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে ছিল ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং হার ছিল ৩৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জনতার খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৮৬ কোটি টাকা যা ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে ছিল তিন হাজার ৮৩১ কোটি টাকা এবং হার ছিল ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০৬ কোটি টাকা যা ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে ছিল চার হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে এক হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে ছিল এক হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
ডিসেম্বরে বিশেষায়িত খাতের বেসিক বাদ দিয়ে অন্য তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৩২ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে বেসিকসহ চারটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১২ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা যা ৩৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা যা তাদের মোট ঋণের ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে এসে বাংলাদেশ কমার্স ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্যদের খেলাপি ঋণ এক অঙ্কের ঘরে আছে। ডিসেম্বরে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এক হাজার ৭০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে যা ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের প্রান্তিক শেষে ছিল ৭ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নীতিমালার আলোকে ২০১৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো নতুন পদ্ধতিতে ঋণ শ্রেণীকরণ করছে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের বেশিরভাগ সময়জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। অনিশ্চয়তার কারণে গত বছরও আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। আর বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপন করেও উৎপাদনে যেতে না পারাসহ নানা কারণে আগের তুলনায় খেলাপি ঋণ বাড়বে বলে আশঙ্কা ছিল ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে অগ্রিম জমার (ডাউন পেমেন্টে) শর্ত শিথিল করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিতে বলা হয়। এ সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করেছে বলে জানা গেছে।