আজ: শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩০ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অত্যাধুনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস প্ল্যান্ট চালু করলো সিঙ্গার বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড সম্প্রতি এর মূল প্রতিষ্ঠান বেকো’র (তুরস্কের কচ গ্রুপের একটি ফ্লাগশিপ প্রতিষ্ঠান) সহযোগিতায় বাংলাদেশে অবস্থিত এর অত্যাধুনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস প্ল্যান্ট-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বাংলাদেশে তুরস্কের মহামান্য রাষ্ট্রদূত জনাব রামিস সেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, এই খাতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনরা এই ইভেন্টে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে বেকো ও সিঙ্গার বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কচ হোল্ডিং-এর কনজ্যুমার ডিউরেবলস গ্রুপ-এর সভাপতি ড. ফাতিহ কেমাল এবিচলিওলু; বেকো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাকান বুলগুরলু; বেকো’র তুর্কিয়ে ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) জান ডিনচার; বেকো’র প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বারিস আলপারসলান; বেকো’র প্রধান উৎপাদন ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা নিহাত বাইজ; বেকো’র প্রধান ক্রয় ও সাপ্লাই চেইন কর্মকর্তা জেম কুরাল; বেকো’র দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক (অর্থ বিভাগ) সিবেল কেসলার; বেকো’র দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক বিপণন, ব্যবসায়িক রূপান্তর এবং বৃদ্ধি বিভাগের পরিচালক হানদান আবদুররাহমানোলু; এবং সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম এইচ এম ফাইরোজ এদের মধ্যে অন্যতম। উপস্থিত অতিথিরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। বিশেষ করে, কচ গ্রুপ, বেকো ও সিঙ্গার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের বাজার নিয়ে তাদের ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর আলোকপাত করেন।

নতুন এই কারখানাটি কেবল সিঙ্গার বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে না; বরং বাজারে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে বলে মন্তব্য করেন কচ হোল্ডিং-এর কনজ্যুমার ডিউরেবলস গ্রুপ-এর সভাপতি ড. ফাতিহ কেমাল এবিচলিওলু। তিনি বলেন, “কোচ হোল্ডিংসে আমরা আমাদের মূল্যবোধ ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন রকম বাজারের পরিবর্তনশীল বাজারের চাহিদা পূরণে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উপযোগী সমাধান নিশ্চিত করতে এবং শিল্পখাত ও কমিউনিটি উভয়েরই উন্নতি হবে এমনভাবে আমাদের বিনিয়োগের কৌশল নির্ধারণ করা হয়। তরুণ ও উদ্যমী জনশক্তি এবং দ্রুত নগরায়নের কারণে দক্ষিণ এশিয়া আমাদের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। গত ১০ বছর ধরে বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রে উদীয়মান বাজার হিসেবে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চল জুড়ে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে বেকো। সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড অধিগ্রহণের পর থেকে গ্রাহক-উপযোগী শিল্পখাত ও বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতে বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাচ্ছে বেকো। বিশেষত, আঞ্চলিক ম্যানুফেকচারিং হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি হিসেবে এই কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ৪,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বিকশিত করা হবে। আমাদের বিশ্বাস, এটি এই অঞ্চলের বাকিদের জন্য মানদণ্ড নির্ধারণে সহায়ক হবে।

১৩৫,০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। এই প্ল্যান্টে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার ও অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস তৈরি করা হবে। এই উদ্যোগটি সিঙ্গার বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বাজারে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে কনজিউমারস ডিউরেবলসের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখবে এই প্ল্যান্ট। এছাড়া, একটি শক্তিশালী স্থানীয় সাপ্লায়ার (সরবরাহ) ইকোসিস্টেম তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে; ফলে, এই খাতের আমদানি নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। অদূর ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে, যা আঞ্চলিক বাজারে সিঙ্গার বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।

নতুন এই প্ল্যান্টটি সিঙ্গার বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই, স্মার্ট এবং সর্বোচ্চ মানের স্থানীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ার সূচনা করবে বলে মন্তব্য করেন বেকো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাকান বুলগুরলু। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ কেবল একটি বাজারের চেয়ে বেশি কিছু; এটি সুযোগ, উদ্ভাবন ও সম্ভাবনার এক অনন্য দিগন্ত। সিঙ্গারের ১২০ বছরের ঐতিহ্য ও সুগভীর স্থানীয় জ্ঞানের সাথে বেকোর বৈশ্বিক দক্ষতা ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সমন্বয় বাংলাদেশে আমাদের প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপনে সহায়ক হবে। ২০১৯ সাল থেকে সিঙ্গার বাংলাদেশে আমরা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ ১৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছি। এই কারখানাটি উৎপাদনের ভবিষ্যৎকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি, পরিবেশ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এলইইডি গোল্ড মানদণ্ড অনুযায়ী নির্মিত এই কারখানায় সৌরশক্তি ব্যবহারের উপযোগিতা ও শূন্য-বর্জ্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পরিবেশগত স্থায়িত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ২০৫০ সালের মধ্যে নিট-শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে বেকোর প্রতিশ্রুতির প্রতিফন ঘটায়। আমি বিশ্বাস করি, এটি মানুষ, এই বিশ্ব ও সমৃদ্ধি, আমাদের সবাইকে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমাদের উন্নত ভবিষ্যতের প্রতীক হয়ে উঠবে।”

সর্বোচ্চ মানের স্থানীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য উন্নত রিটেইল অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪ সালে রূপান্তর যাত্রা শুরু করে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড। এই কৌশলগত উদ্যোগের অংশ হিসেবে, প্রতিষ্ঠানটি এর সদর দপ্তর একটি নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত করে; বেকো’র বিশ্বব্যাপী সমাদৃত মান অনুসরণ করে তৈরি করা হয় নতুন এই সদর দপ্তর। এছাড়া, গুলশান ১-এ চালু করা হয়েছে ভিন্নধর্মী একটি কনসেপ্ট স্টোর। নতুন এই প্ল্যান্ট উদ্বোধনের মাধ্যমে এই যাত্রায় আরেকটি মাইলফলক অর্জন করলো সিঙ্গার। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি গুলশান ২-এ নতুন আরেকটি কনসেপ্ট স্টোর চালু করেছে। বাংলাদেশে কচ গ্রুপ ও বেকো’র দক্ষতা এবং গুণমান নিয়ে আসার মাধ্যমে ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা উন্নত করাই প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিঙ্গার বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য।

সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম.এইচ.এম. ফাইরোজ বলেন, “সিঙ্গার বাংলাদেশে, আমরা আমাদের কার্যক্রমের মূলে গ্রাহক-কেন্দ্রিকতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের চলমান রূপান্তরের লক্ষ্য হল বাংলাদেশের বাজারে সমসাময়িক এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত গুণমান নিয়ে আসার মাধ্যমে আমাদের মূল্যবান গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা উন্নত করা। সিঙ্গার বাংলাদেশকে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা টেকসই খাতের বিকাশ এবং বাংলাদেশি গ্রাহকদের জীবন উন্নত করতে বৈশ্বিক দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছি।”

নতুন এই কারখানার ডিজাইন সূর্যের আলোর উত্তম ব্যবহার (অপ্টিমাইজ) নিশ্চিত করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য স্কাইলাইট ছাদ বানানো হয়েছে; ফলে, প্রাকৃতিক আলো সুন্দরভাবে প্ল্যান্টে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে কারখানার ছাদের সৌর প্যানেল ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কার্বন নির্গমন রোধ করবে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ল্যান্ডস্কেপ ইরিগেশনের (সেচ) কাজে ব্যবহার করা হবে। টেকসই অনুশীলন ও গুণমানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এনার্জি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া, প্ল্যান্ট নির্মাণের সময় স্থানীয় ও পুনর্ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টা টেকসই উন্নয়নের প্রতি বেকো’র প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এমন উদ্যোগ সাধারণ গ্রাহক এবং সাড়া পৃথিবীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসবে বলে আশাবাদী সিঙ্গার বাংলাদেশ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.