আজ: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং, ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার |

kidarkar

তিন দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে চীনের পণ্যে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা, মেক্সিকো এবং চীন।

ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন কোম্পানি যারা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি কোনো মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক মেক্সিকো থেকে একটি যন্ত্রাংশ আমদানি করে, তবে এটি দেশে আসার পরে তাকে শুল্ক দিতে হবে। এভাবে সবক্ষেত্রেই অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাব পড়বে।

ওভাল অফিসে বক্তৃতাকালে ট্রাম্প গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, তার এমন সিদ্ধান্তের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী ও ফেন্টানিল প্রবেশ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যই আমি এই শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার মতে, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের বিষয়টি মার্কিন অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হবে।

ট্রাম্প জানান, তিনি চীনের ওপরও নতুন শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছেন, যা আগে ১০ শতাংশ হারের কথা বলা হলেও আরও বাড়তে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সরবরাহ করছে, যার ফলে হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক মারা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে চীনের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল, যার একটি বড় কারণ ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক শুল্ক বৃদ্ধির নীতি।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্য ও সেবার ৭৫ শতাংশই আসে কানাডা থেকে। ফলে ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে কানাডা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির প্রায় এক চতুর্থাংশই ছিল অপরিশোধিত তেলের আমদানি যা আর্থিক মূলে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।

তিন দেশের ওপর ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছেন তা আগামী মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হবে। ট্রাম্পের এমন নির্দেশের কারণে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এমনকি তা মার্কিন কর্মী-শ্রমিকদের ও ক্ষতি করবে। ট্রাম্পের শুল্কের জন্য খোদ মার্কিন ভোক্তাদেরই মাশুল গুনতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিৎজ বলেন, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন শুল্কের প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় সারাবিশ্বের জন্যই খুব খারাপ হবে।

শেষবার ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউজে ছিলেন তখন চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সে সময় বেইজিং সয়াবিন এবং ভুট্টাসহ বেশ কিছু মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করে। এই পদক্ষেপটি শেষ পর্যন্ত মার্কিন কৃষকদের এবং যারা চীনের সঙ্গে ব্যবসার ওপর নির্ভর করেছিল তাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হানবে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক আরোপ, উত্তেজনা ও পাল্টা ব্যবস্থা বাণিজ্য যুদ্ধে মোড় নেবে। ফলে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত বিনিয়োগ কমে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যেও একই হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ওই ঘোষণার পর মেক্সিকো জানিয়েছে যে, তারা একই ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

সব মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তার জবাবে শুল্কসহ পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম।

সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর স্বার্থ সংরক্ষণে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ পদক্ষেপসহ প্লান বি বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি লিডারস এসোসিয়েশন বলছে, দেশগুলোকে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাজ করা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি যে প্রেসিডেন্ট একটি সমঝোতার জন্য কাজ করছেন। চার দেশের নেতাদের ৪ ফেব্রুয়ারির আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করা উচিত। কারণ ব্যাপক ভিত্তিক শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

চীনের দিক থেকেও একই ধরনের ঘোষণা এসেছে। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এই পদক্ষেপের বিরোধী। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.