মাদ্রিদের ছয় মিনিটের জাদুতে স্তব্ধ ম্যানসিটি

স্পোর্টস ডেস্ক : ইতিহাদে ম্যানচেস্টার সিটির ভক্তরা রদ্রির ব্যালন ডি’অর জয়ের আশা নিয়ে বিশাল এক টিফো উন্মোচন করেছিল। ব্যানারে লেখা ছিল, “তোমাদের কান্না এবারে থামাও।” তবে শেষ বাঁশি বাজার পর দেখা গেল, সত্যিকারের কান্নাটা কেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ! ম্যাচ শেষে ভিনিসিয়ুস যখন ক্যামেরার সামনে রিয়ালের ব্যাজ দেখিয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন তাদের ১৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার কথা, তখনই বোঝা যাচ্ছিল, ইউরোপের রাজারা এখনো তাদের সিংহাসন ছাড়েনি।
কিন্তু এই জয়টা রিয়াল পেল যেভাবে, সেটাই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। ম্যাচের ৮৫তম মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ম্যানসিটি, স্কোরলাইন তখন ২-১। মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যে সব বদলে দিল লস ব্লাঙ্কোসরা! যোগ করা সময়সহ এই স্বল্প সময়ে রিয়াল করল দুই গোল, স্তব্ধ করে দিল পুরো ইতিহাদ। ফুটবল প্রেমে নতুন করে পড়তে বাধ্য করল রিয়াল মাদ্রিদ!
হালান্ডের আগুন শুরু, কিন্তু…
ম্যানসিটি তাদের চিরচেনা পজেশন-ভিত্তিক ফুটবলের প্রদর্শনী দেখিয়ে শুরুতেই দখল নেয় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। এর ফল আসে ১৯ মিনিটেই। জ্যাক গ্রিলিশের দুর্দান্ত ক্রস বুক দিয়ে আলতো ছুঁয়ে হালান্ডের জন্য সেটআপ করেন গাভার্দিওল। সামনে কেউ নেই, হালান্ডের পক্ষে মিস করা সম্ভবই ছিল না। ১-০!
তবে এই গোলই যেন রিয়ালকে জাগিয়ে তুলল। ২৫ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত দলটি, কিন্তু ভিনিসিয়ুসের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এরপর রিয়ালের জন্য ভালো খবর হয়ে আসে গ্রিলিশের চোট। দুর্দান্ত খেলতে থাকা ইংলিশ উইঙ্গার মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলে বদলি হিসেবে নামেন ফিল ফোডেন। তবে সিটি সুযোগ পেলেও, দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন থিবো কর্তোয়া।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে বড় সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে, কিন্তু অরক্ষিত থেকেও শট উড়িয়ে মারেন। বিরতির পর ৫৪ মিনিটেও মিস করেন সহজ সুযোগ। তবে ৬০ মিনিটে কঠিন এক সুযোগ থেকে গোল করে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন ফরাসি তারকা। ভালভের্দের ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে দানি সেবায়োস বাড়িয়ে দেন এমবাপেকে, যিনি এক অদ্ভুত শটে জড়িয়ে দেন সিটির জালে। ১-১!
সিটির আত্মঘাতী ভুল, রিয়ালের মহাকাব্যিক কামব্যাক
এরপর ম্যাচের রাশ কিছুটা রিয়ালের হাতেই ছিল। কিন্তু ৮০ মিনিটে নিজেদের ভুলেই সমস্যায় পড়ে দলটি। ফোডেনকে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দেয় রিয়াল, যা থেকে সহজেই হালান্ড গোল করেন। ২-১!
তবে এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। ৮৪ মিনিটে রদ্রিগোর বদলি হিসেবে নামানো হলো ব্রাহিম দিয়াজকে। আর নামার মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে নিজের সাবেক দলের জাল কাঁপিয়ে দেন তিনি। সিটির ডিফেন্ডারদের ভুলের সুযোগ নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জড়িয়ে দেন বল জালে। গোলের পর অবশ্য উদযাপন করলেন না, সম্মান জানালেন পুরোনো ক্লাবকে।
কিন্তু রিয়াল যেখানে থামে না, সেখানে সিটি শেষ বাঁশির অপেক্ষায় ছিল। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সিটির রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে দেন ভিনিসিয়ুস। একাই বল টেনে নিয়ে বোকা বানিয়ে দেন রিকো লুইস ও রুবেন দিয়াজকে। গোলরক্ষক এদেরসনের সামনে গিয়ে শট না নিয়ে আরও ধৈর্যের পরিচয় দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। নিশ্চিত গোলের জন্য পাস দেন বেলিংহামকে, যিনি ঠাণ্ডা মাথায় বল জড়ান জালে। ৩-২!
ইতিহাদ স্তব্ধ। ম্যানসিটি বুঝতে পারে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে “নেভার রাইট অফ রিয়াল মাদ্রিদ” কথাটা আসলে কতোটা সত্যি! ফেরার লেগ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে, যেখানে রিয়াল বরাবরই ভয়ঙ্কর। পেপ গার্দিওলার দল কি পারবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে? নাকি এই ছয় মিনিটই তাদের বিদায়ের রূপরেখা লিখে দিল? ১৯ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে উত্তর!