আজ: রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ইং, ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, সোমবার |

kidarkar

ফের আইন লঙ্ঘন, প্রতারণার শিকার কৃষিবিদ ফিডের বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:  পুঁজিবাজারে এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড যেন আইনের তোয়াক্কাই করছে না। একের পর এক আইন লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি। গত বছরের (২০২৩) ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের এখনো পরিশোধ করেনি। ফান্ড সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের অর্থ কোম্পানিটি অন্য খাতে ব্যবহার করেছে, যেটি সম্পূর্ণ আইন লঙ্ঘন। এরই মধ্যে আবারও আইন লঙ্ঘন করে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। গত বছরের লভ্যাংশের অর্থ পরিশোধ না করে আবারও নতুন করে লভ্যাংশ ঘোষণাকে প্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীরা। এর আগেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একাধিকবার সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ৩০ জুন,২০২৪ সমাপ্ত হিসাববছরের শেয়ারহোল্ডারদের শুধুমাত্র ৫ শতাংশ বোনাস (স্টক ডিভিডেন্ড) লভ্যাংশ ঘোষণা এসএমই বোর্ডের কোম্পানিটি। তবে এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সমাপ্ত বছরের জন্য ঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ ও ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ একবছরেও বিনিয়োগকারীদের পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানিটি। গত বছরের লভ্যাংশের অর্থ বিনিয়োগকারীদের পরিশোধ না করে কোম্পানিটি অন্য খাতে খরচ করে। একবছরেও লভ্যাংশ পরিশোধ না করে নতুন করে লভ্যাংশ ঘোষণাকে প্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, গত ৩০ জুন,২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের কৃষিবিদ ফিডের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। যার রেকর্ড ডেট ছিলো ২০২৪ সালের ০৩ মার্চ। আর এজিএম ছিলো ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ। এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে এ লভ্যাংশ অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ লভ্যাংশের সেই অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধই করেনি। লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা না দেওয়াকে মহাপ্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীরা। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডদের অনুমোদনের ৩০দিনের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে হবে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা আদেশে বলা হয়, অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে লভ্যাংশ জমা করতেই হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের একবছর হতে গেলেও সেই লভ্যাংশের অর্থ এখনো বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে পাঠায়নি এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির লভ্যাংশের অর্থ পাঠানোর শেষ সময় ছিল ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড কোম্পানি সচিব মো. মামুন আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালের জন্য ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছিলো। যার ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। তবে লভ্যাংশের অর্থ কেনো পরিশোধ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফান্ড সংকটের কারণে কোম্পানি টিকিয়ে রাখতে ডলার সংকটের কারণে লভ্যাংশের কিছু অর্থ অন্যখাতে ব্যবহার করা হয়েছে। যেকারনে লভ্যাংশের অর্থ বিনিয়োগকারীদের পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগরই তা পরিশোধ করার চেষ্টা চলছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, এবিষয়ে এখনি কিছু বলতে পারছি না। ভালোভাবে জেনে-বুঝে জানাতে পারবো।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা শুধুমাত্র দায়সারা সতর্ক করেই ক্ষান্ত দিচ্ছে, ফলে কৃষিবিদ ফিড লিমিটেডের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদি বিএসইসি এবং ডিএসই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএম সম্পন্ন করার ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিত, তাহলে বিগত একবছর এই কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য অংশটুকু দিতে তালবাহানা করার সুযোগ পেত না। কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড ২০২৩ সালের ঘোষিত লভ্যাংশের জন্য গতবছরের ২৮ মার্চ এজিএম সম্পন্ন করেছে, নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য অংশটুকু তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা বিও একাউন্টে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে এই নিয়মের কোন ধার ধারেনি।

অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইভাবে কোন দেশের শেয়ার বাজার চলতে পারে না, নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি বিনিয়োগকারী স্বার্থ রক্ষা করতে না পারে তাহলে এই বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী আসবেনা। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে এসএমই বোর্ডের তালিকার শেয়ার গুলোর বিষয়ে বারবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বরাবর চিঠি দিয়েও কোন সুরাহা করা যায়নি। বিনিয়োগকারীদের দাবি, যেহেতু এসএমই বোর্ডের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন সেহেতু এই এসএমই বোর্ড বিলুপ্ত করে এই বোর্ডের সকল শেয়ারকে মূল মার্কেটে স্থানান্তর করে সঠিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনা উচিত।

কোম্পানির কিছু কর্মকর্তারা জানান, চেয়ারম্যান ড. আফজালের নির্দেশ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষাতেই ডিভিডেন্ট পরিশোধ আটকে আছে। তবে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

এর আগেও আইন বহির্ভূতভাবে কৃষিবিদ ফিডের উদ্যোক্তা পরিচালক জিন্নাত আরা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের বিধি ৪ এর ২ উপবিধির লঙ্ঘন হয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোন কোম্পানির বার্ষিক হিসাব সমাপ্ত হওয়ার দুই মাস পূর্ব থেকে পরিচালনা পর্ষদ কতৃক উক্ত হিসাব বিবেচিত, গৃহীত বা অনুমোদিত হওয়ার সময়কাল পর্যন্ত কোন পরিচালক, স্পন্সর কেউ শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। যেহেতু কৃষিবিদ ফিড জুন ক্লোজিং বা হিসাববছর সমাপ্ত হয় জুন মাসে (জুলাই-জুন)।

এছাড়াও, গত ৩০ জুন,২০২৩ সমাপ্ত হিসাববছরের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বোনাস ও নগদ মিলিয়ে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্সের ২ সিসি এবং কন্সেন্ট লেটার (সম্মতি পত্র) কন্ডিসন (শর্ত) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কনসেন্ট লেটার কন্ডিসন (সম্মতি পত্রের শর্ত) অনুযায়ী এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যুর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন শুরু করে কৃষিবিদ ফিড। সেই হিসাবে এখনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করার কোনো সুযোগ নেই কোম্পানিটির। যেহেতু এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না এমন শর্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি কৌশলের আশ্রয় নেয়।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.