কমিটি ছিল, কাজ ছিল না—নিষ্ক্রিয় উপদেষ্টা কমিটি বাতিল করল বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি অবশেষে বাতিল করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাঁচ বছর ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকা এ কমিটির কোনো কার্যক্রম বা রেকর্ড না থাকায় কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে বিএসইসির ওয়েবসাইট থেকেও কমিটির তথ্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
২০১১ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নির্দেশে এ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। তৎকালীন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক। মূল উদ্দেশ্য ছিল—পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নীতি পরামর্শ দেওয়া।
কমিটিতে বিএসইসি কমিশনারদের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এফবিসিসিআই, আইসিএবি, আইসিএমএবি, ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, আইসিবি, বিআইএ এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ কমিটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
২০২০ সালে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর পদাধিকারবলে তিনি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তার প্রায় পাঁচ বছরের মেয়াদেও এ কমিটির কোনো কার্যকর সভা, সুপারিশ বা নীতি প্রস্তাবের রেকর্ড নেই। অবশেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বিএসইসি পুরনো ও অকার্যকর এ কমিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, “পূর্বের উপদেষ্টা কমিটি বাতিল করা হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন করে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে।”
অপরদিকে পুঁজিবাজার মনিটরিং ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ২০২৫ সালের ১৭ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একটি চার সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক ফারজানা লালারুখ। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব।
নতুন এই কমিটির দায়িত্ব হবে—পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ানো, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি, করপোরেট গভার্ন্যান্স উন্নয়ন এবং নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বিএসইসিকে কার্যকর সুপারিশ দেওয়া।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ও বাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বিএসইসির এই নতুন পদক্ষেপকে সময়োচিত বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।