ঈদের পরও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা, ১২ দিনেই এসেছে ১০৫ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতরের পরেও দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে লক্ষণীয় ইতিবাচকতা বজায় রয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনেই বৈধপথে দেশে এসেছে ১০৫ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের প্রবণতা কমে যাওয়ায় এবং অর্থপাচার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধপথে অর্থ পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের মধ্যে তফাৎ না থাকায় প্রবাসীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রিজার্ভের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের প্রথম ১২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একমাত্র কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ কোটি ৩ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
তবে এই সময়ের মধ্যে ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) এবং বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সিটিজেন ব্যাংক, আইসিটি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। বিদেশি ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
চলতি বছরের মার্চ মাসে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১০.৬১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় ১৫৮ কোটি ডলার বেশি। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বৈধপথে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি ডলার, অর্থাৎ এ বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৭০ কোটি ডলার।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ডিসেম্বর মাসে দেশে সর্বোচ্চ ২.৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা দেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড ছিল। তবে মার্চে সেটিও ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত টানা আট মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধারাবাহিকতা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।