আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ জুন ২০১৬, বুধবার |

kidarkar

ইউনাইটেড পাওয়ার কর্তৃক অন্য ২ কোম্পানি অধিগ্রহণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থিতি অবস্থা জারি

UPGD-ইউনাইটেড পাওয়ার-ইউনাইটেড পাওয়ারেরশেয়ারবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ইউপিজিডিসিএল) কর্তৃক অন্য ২ কোম্পানি অধিগ্রহণের বিষয়ে স্থিতি অবস্থা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউনাইটেড পাওয়ার কর্তৃক ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেড ও শাহজাহানউল্লাহ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। আপিল বিভাগের রায়ের ফলে প্রক্রিয়াটি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় স্থিত থাকবে।

ইউনাইটেড পাওয়ারের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৫ সালের ২৪ জুন ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেড ও শাহজাহানউল্লাহ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি বছরের ২ মার্চ হাইকোর্ট ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেড ও শাহজাহানউল্লাহ পাওয়ার জেনারেশন অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধরায় দু্‌ই কোম্পানি অধিগ্রহণ করার অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইউনাইটেড পাওয়ার একটি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ কোম্পানি। এটি গ্যাসভিত্তিক জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যৎ উৎপাদন করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকে কোম্পানিটি। প্রাপ্ত অনুমোদনের আলোকে আগামী প্রায় ২৩ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারবে কোম্পানিটি।তবে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আরেকবার ৩০ বছরের জন্য তা নবায়নের সুযোগ আছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) ৮৬ মেগাওয়াট ও চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) ৭২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কোম্পনিটি।

ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৩ মেগাওয়াট। শাহজাহানউল্লাহ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ২৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। কোম্পানি দুটি তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে থাকে।

 অধিগ্রহণের পর ইউনাইটেড পাওয়ারের উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ২৩৯ মেগাওয়াট।

৬৫২ কোটি টাকায় কোম্পানি দুটি কিনেছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানি দুটির অবণ্টিত মুনাফার পরিমাণ ৩৫৩ কোটি টাকা। এ হিসেবে প্রকৃত মূল্য পড়েছে ২৯৯ কোটি টাকা। দুটি কোম্পানিই ঋণমুক্ত বলে জানা গেছে।

অধিগ্রহণের ফলে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইউনাইটেড পাওয়ারের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। স্কিম অনুসারে গত নভেম্বর থেকে এ দুই কোম্পানির আয়-ব্যয়, সম্পদ-দায় সবই ইউনাইটেড পাওয়ারের সঙ্গে মিশে যায়। একীভূতকরণের পর ইউপিজিডিসিএলের বিদ্যুত উত্পাদন সক্ষমতা ১৫৮ থেকে ২৩৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। নিজস্ব অর্থে আলোচিত দুই কোম্পানি কিনেছে ইউনাইটেড পাওয়ার।নতুন কোম্পানি কেনার জন্য ইউনাইটেড পাওয়ারকে তার মূলধন বাড়াতে হয়নি, এর কারণে শেয়ার সংখ্যাও বাড়েনি। কোম্পানিটিকে ব্যাংক থেকেও কোনো ঋণ নিতে হয়নি।

হালনাগাদ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে ইউনাইটেড পাওয়ারের রাজস্ব আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। গ্রস (মোট) মুনাফা বেড়েছে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ। প্রশাসনিক ব্যয় একীভূতকরণপূর্ব জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ৭৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৪১ দশমিক ২২ শতাংশ। এ সময়ের ব্যবধানে সুদ বাবদ ব্যয় ৮০ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমিয়ে এনেছে কোম্পানিটি। সব মিলিয়ে কর-পূর্ব মুনাফা বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গেল প্রান্তিকে কর সঞ্চিতি রাখতে না হওয়ায় কর-পরবর্তী মুনাফায় প্রবৃদ্ধি আরো বেড়ে ৪৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

একীভূতকরণের আগে ও পরের বিভিন্ন আর্থিক অনুপাত বিশ্লেষণেও কোম্পানিটির পারফরম্যান্সে উন্নতি চোখে পড়ে। গেল প্রান্তিকে কোম্পানির গ্রস প্রফিট মার্জিন কিছুটা কমলেও প্রশাসনিক ও সুদ ব্যয় কমায় নিট প্রফিট মার্জিন এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল মোট বিক্রির ৬১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, গেল প্রান্তিকে যা ৬৬ দশমিক ৪৫-এ উন্নীত হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যয় মোট বিক্রির ৫ দশমিক ২৮ থেকে দশমিক ৯৩ শতাংশে এবং সুদ ব্যয় ৫ দশমিক ৭৩ থেকে দশমিক ৮৪-এ নেমে এসেছে।

সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, নীতিনির্ধারণী নির্দেশনার কারণে তালিকাভুক্ত অন্য অনেক কোম্পানির মতোই ১ জুলাই থেকে ২০১৬-১৭ হিসাব বছর শুরু করতে যাচ্ছে ইউপিজিডিসিএল। এ কারণে ২০১৫ সালের বার্ষিক ফলাফল প্রকাশের পরিবর্তে চার প্রান্তিকের অন্তর্বর্তী নিরীক্ষিত ফলাফল প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। এবার ১৮ মাসে হিসাব বছর গণনা করা হবে বলে এ সময়ের জন্য ৮০ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। ২০১৫ সালে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪২ পয়সা, ২০১৪ সালে যা ছিল ৭ টাকা ৫৫ পয়সা।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইউনাইটেড পাওয়ার ৩ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে মোট ২৩৭ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৪২ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ সংগ্রহ করা হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ারের ৯০ শতাংশই রয়েছে এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে।

গত বছর পর্ষদে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইউনাইটেড পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ বলেছিলেন, কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তারা দুটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তখন বলেন, এই অধিগ্রহণ শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি তাদের কোম্পানির উপহার। কারণ দুটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করা হলেও তার জন্য মূলধন বাড়েনি ইউনাইটেড পাওয়ারের।

এদিকে ইউনাইটেড পাওয়ারের অধিগ্রহণ বিষয়ে আদালতে যাওয়ার বিষয়ে বিএসইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা অধিগ্রহণ বিরোধী নন। তবে অধিগ্রহণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কি পরিমান সংরক্ষিত হচ্ছে তা দেখা তাদের দায়িত্ব। সেই জায়গা থেকেই তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।

শেয়ারবাজারনিউজ/রু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.