বুক বিল্ডিং পদ্ধতি: প্রাতিষ্ঠানিক কোটা বরাদ্দ নিয়ে অসন্তোষ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা বরাদ্দের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার ডিলাররা। অসন্তোষ প্রকাশ করে তারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্যাটাগরিভিত্তিক সংখ্যার ও সক্ষমতার বিষয়টি আমলে না নিয়ে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় কোটা বরাদ্দ সংশোধনের দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সর্বশেষ পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পৃথক ১০টি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোটার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। এতে ২০০ ব্রোকার ডিলার প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে যে পরিমাণ শেয়ার কেনার সুযোগ পাবে, মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড একই পরিমাণ শেয়ার পাবে। অবশ্য সংশোধিত আইনে কোনো আইপিও এখনও বাজারে আসেনি।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোটা বরাদ্দের থেকেও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে শেয়ারদর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি। দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পেশাদারী আচরণে উন্নতি না হওয়ায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা আইপিওতে অস্বাভাবিক দর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বুক বিল্ডিংয়ের নতুন পদ্ধতিতে বিডিংয়ে শেয়ার দর প্রস্তাবের নিম্নসীমা (১১ টাকা) থাকলেও সর্বোচ্চ সীমা নেই। ফলে শেয়ার পাওয়া নিশ্চিত করতে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী দর বাড়িয়ে যেতে পারে। তাতে কোনো কোম্পানির শেয়ার অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
পাবলিক ইস্যু রুলসের সর্বশেষ সংশোধনের পরও বুক বিল্ডিং আইনের কিছু দুর্বলতা আছে বলে স্বীকার করেছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার স্বপন কুমার বালা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, দর নির্ধারণ পদ্ধতিতে দুর্বলতা রয়েছে। আইনের কিছু সমস্যা বিষয়ে কমিশন অবহিত। নতুন আইনে অন্তত একটি কোম্পানির আইপিও আসুক। অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োজনে আবারও আইনটি সংশোধন করা হবে।
বিতর্ক এড়াতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারদর নির্ধারণে ‘ডাচ্-অকশন পদ্ধতি’ অনুসরণ ভালো পন্থা হতে পারে বলে মত দেন স্বপন কুমার বালা। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে কোনো বিনিয়োগকারী যে দর প্রস্তাব করেন, তাকে সে দরেই শেয়ার কিনতে হয়। এতে নিজেদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আরও দায়িত্বশীল হন। এ ছাড়া ভারতের মতো ‘অ্যাঙ্কর ইনভেস্টর’ পন্থাও অনুসরণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দর নির্ধারণের আগেই অ্যাঙ্কর ইনভেস্টর গ্রুপ নির্দিষ্ট দরে শেয়ার কিনতে পারে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা তৈরি হয়।
এর বাইরে নির্দিষ্ট মূল্য পদ্ধতির আইপিওতে প্রিমিয়ামসহ আইপিও অনুমোদনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনিয়ম করছে এমন সমালোচনার মুখে সংস্থাটি প্রিমিয়াম চাইলেই বুক বিল্ডিং পদ্ধতি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে আইনের সংশোধন করেছে, যার গেজেট প্রকাশ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। তবে তাড়াহুড়া করে আইন সংশোধন করায় এতেও বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ পদ্ধতিতে কোনো আইপিওতে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আমরা নেটওয়ার্ক, বেক্সিমকো পেপার মিলসসহ কয়েকটি কোম্পানি।
কোটা বরাদ্দ : প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১০টি ক্যাটাগরির মধ্যে সর্বাধিক ২০০ প্রতিষ্ঠান আছে ব্রোকার ডিলার ক্যাটাগরিতে। পরের অবস্থানে বীমা ক্যাটাগরিতে ৭৭টি। ব্যাংক ক্যাটাগরিতে আছে ৬০টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক ক্যাটাগরিতে ৫৬, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক ক্যাটাগরিতে ৩১, বিদেশি বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরিতে ২০, পেনসন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড ক্যাটাগরিতে ২০, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ক্যাটাগরিতে ১৮ এবং অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এসব ফান্ডের ম্যানেজার ক্যাটাগরিতে দুটি করে মোট চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্রোকার ডিলারদের মধ্যে সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলে এদের সবাই শেয়ার ক্রয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে আনুপাতিক হারে সবচেয়ে কম শেয়ার পাবে।
অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য ফান্ডকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এমন কোটা করা হয়েছে বলে মনে করেন অন্যতম প্রধান ব্রোকারেজ হাউস ব্র্যাক ইপিএলের সিইও শরীফ এমএ রহমান। তিনি বলেন, ফান্ডগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা খারাপ নয়। তবে এখানে অন্যদের সক্ষমতা এবং বাজারে বিনিয়োগে কতটা সক্রিয়, তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
ডিএসইর পরিচালক ও শাকিল রিজভী স্টক ব্রোকারেজ হাউসের এমডি শাকিল রিজভী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যেভাবে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে কিছুটা অসঙ্গতি আছে। এটা সংশোধন করা দরকার।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ/ম.সা