আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ জুলাই ২০১৬, সোমবার |

kidarkar

জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি

multinationalশেয়ারবাজার রিপোর্ট: অর্থ আইন ২০১৫ অনুযায়ী ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব কোম্পানির জন্য কর বছরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জুন ক্লোজিং করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয় ৩০ জুন। এতে দেশীয় কোম্পানিগুলো বিশেষ সমস্যায় না পড়লেও সদর দফতরের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে কিছু বহুজাতিক কোম্পানি। এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারিগুলোও একই সমস্যায় পড়ে। এ অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানকে জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার।

প্রকাশিত অর্থ আইন, ২০১৬-এর গেজেটে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সর্বজনীন হিসাব বছর প্রবর্তনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বিদেশে অবস্থিত মূল কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে হিসাব বছর নির্ধারণ করতে পারবে।

এছাড়া দেশের ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে মূল কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে অভিন্ন হিসাব বছর নির্ধারণ করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাব বছর হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর।

জুলাই-জুন কর বছর হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দুটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। এতে কোম্পানির প্রস্তুতকৃত আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সংশয় থাকে। ২০১৫ সালে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানির জন্য সর্বজনীন হিসাব বছর প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কর বছর ও হিসাব বছর একই সময়ে রাখা। এতে কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত হিসাব বছরের জন্য একটি অর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারবে।

কিন্তু বিদেশে অবস্থিত মূল কোম্পানি ও দেশে এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বছর আলাদা হওয়ার কারণে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিকে তাদের জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।

দেশের শেয়ারবাজারে মোট ১২টি বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া অন্যগুলো হিসাব বছর গণনা করে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে। এসব কোম্পানি হচ্ছে বিএটিবিসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন, লিন্ডে বিডি, বাটা সু, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, গ্রামীণফোন, সিঙ্গার বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার ও আরএকে সিরামিক। এদিকে ম্যারিকোর হিসাব বছর সমাপ্তির তারিখ ৩১ মার্চ। প্রতিটি কোম্পানিই অন্য দেশে অবস্থিত তাদের মূল কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে হিসাব বছর নির্ধারণ করে, যাতে মূল কোম্পানি সহজে সমন্বিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। তবে অর্থ আইন, ২০১৫ পরিপালন করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনাটি মূল কোম্পানির সমন্বিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় দেশে অবস্থিত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হিসাব বছর নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব কোম্পানিকে অর্থ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

অর্থ আইন, ২০১৬-এর ১৬-এর ‘গ’ ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশে অবস্থিত কোম্পানি, দেশে যাদের সাবসিডিয়ারি কিংবা হোল্ডিং কোম্পানি রয়েছে এবং যারা মূল কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে অভিন্ন হিসাব বছর নির্ধারণ করতে চায়, তাদের আবেদনে উপকর কমিশনার অনুমতি দেবেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে উপ-কর কমিশনারের কাছে আবেদন করতে হবে।

অর্থ আইনের এ পরিবর্তনের ফলে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানি ব্যতীত অন্য কোম্পানিকে জুন-জুলাই হিসাব বছর ধরে সর্বজনীন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত উৎপাদনমুখী ও সেবা খাতের কোম্পানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়কালকে হিসাব বছর হিসাব করে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। তবে ডিসেম্বর হিসাব বছর শেষ হলেও অর্থ আইন, ২০১৫ পরিপালনে বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে পারেনি। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এরই মধ্যে হিসাব বছর পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আইন অনুযায়ী এসব কোম্পানিকে চলতি হিসাব বছরে ১৮ মাসের জন্য আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। প্রতিস্থাপিত বিধানের কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এখন দুটি হিসাব বিবরণী তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের জন্য একটি এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালের পৃথক আরেকটি হিসাব বিবরণী ও আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে হবে। এটি শুধু প্রথম বছরের জন্যই প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির কর বছর হবে ২০১৬-১৭। অর্থাৎ একই কর বছরে কোম্পানির দুটি কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত আয় বছরের জন্য পরবর্তী বছরের ১৫ জুলাই ও ৩০ জুন তারিখে সমাপ্ত আয় বছরের ক্ষেত্রে ৩১ ডিসেম্বর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.