আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ জুলাই ২০১৬, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ভাগ্য দোষে নয়, অভাবের তাড়নাই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!

911শেয়ারবাজার ডেস্ক: অভাবের তাড়নায় তিনদিনের শিশু লিউ জিউরংকে একটি এতিমখানার গেটে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন মা। এরপর পেরিয়ে গেছে ৩৯টি বছর। প্রায় দুই কুড়ি বছর পর সেই মাকে খুঁজে বের করলেন মেয়ে। তবে প্রতিশোধ নিতে নয়, একবার মা বলে ডাকার জন্য। মায়ের কোলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। বিরল এই ঘটনাই ঘটেছে চীনের পূর্বঞ্চলীয় শহর রুইয়ানে। ৩৯ বছর পর প্রচণ্ড আবেগঘন মিলন ঘটে মা ও মেয়ের।

শহরের একটি এতিমখানার ফটকের ঠিক সামনে ১৯৭৭ সালে ফেলে রাখা হয়েছিল তিনদিনের শিশু লিউ জিউরংকে। এখন তার বয়স ৩৯। তার মার নাম চেন জিনমেই, ৭০ বছরের কাছাকাছি তার বয়স। মা-মেয়ের মিলনের পরই তারা জানতে পারলেন খুব দূরে ছিলেন না, তারা ছিলেন একেবারে কাছাকাছি। আধা কিলোমিটারের মধ্যে। অপ্রত্যাশিত এ মিলনে দু’জনের চোখেই অশ্রুর বান ডাকে। জড়িয়ে ধরেন একে অন্যকে। চেন জিনমেইয়ের কান্নাটা যেন বেশি। নিজের ভেতরে একদিকে ছিল অপরাধবোধ, অন্যদিকে ছিল দীর্ঘ সময় পর নাড়িছেড়া ধনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন হু হু করে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি মেয়ে লিউ। আবেগঘন এই মুহূর্তে চেনের অন্য মেয়েরাও ছিলেন কাছেই। তারাও পানি সামলে রাখতে পারছিলেন না চোখের।

লিউ যখন জন্ম নেন, তখন চেনের পরিবারে ছিল আরও চার মেয়ে। অভাব-অনটনও এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে দিনই কাটছিল না তাদের। ফলে তারা তাদের পঞ্চম মেয়েকে শহরের এতিমখানার বাইরে ফেলে রাখার এই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেন। দত্তক হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার আগ পর্যন্ত জিউরংকে এতিমখানায় থাকতে হয়েছে প্রায় দুই মাস। তাকে দত্তক নেন পাশের জেলা ওয়েনচেংয়ের একটি পরিবার। যে পরিবারটি তাকে দত্তক নেন সেই পরিবারে কোনো সন্তান ছিল না। একটি সন্তান হয়ে মারা যায় জন্মের পরপরই। দত্তক পরিবার সম্পর্কে লিউ জিউরং বলছেন, ”তাদেরও আর্থিক অবস্থা তখন খুব একটা ভাল ছিল না। দত্তক নেয়ার পরপরই তাদের দু’জনের জমজ কণ্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারপরও তারা তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। এমন কি, উচ্চ স্বরে কথা পর্যন্ত বলেননি।” দত্তক বাবা-মা কোনো কথাই গোপন করেননি। এমন কি, তিনি যে দত্তক সে কথাও গোপন করেননি। সব কথাই তাকে বলেছেন খোলামেলা। তবে নয় বছর হওয়ার পর।

লিউ-এর বয়স যখন ১১, তখন তার দত্তক মা মারা যান। সেই সময় তাদের আর্থিক অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে যায় যে, পরিবারের ভরণপোষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তার দত্তক বাবা। তাই ১৬ বছর বয়সে কাজ করে খাওয়ার সিদ্ধন্ত নেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কাজের সন্ধানে। কিন্তু লিউ-এর অন্তরে সব সময় ছিল নিজের মাকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা। নিজের সম্পর্কে যা তথ্য তার জানা ছিল, তার সবই তুলে ধরেন তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকায়। এভাবে তিনি কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিতও হন। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যায়। এদিকে লিউ-এর খোঁজ করতে থাকেন তার বোনরাও। উ জিউপিং বলেছন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরাও তাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু একই ধরনের সমস্যায় আমাদেরও পড়তে হয়। ব্যর্থ হয় সব উদ্যোগ।’ ‘এরপর একদিন আমাদের এক প্রতিবেশী এসে জানান যে, তিনি পত্রিকায় একটি ছবি দেখেছেন, যিনি তার জন্মদাত্রী মার খোঁজ করছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি যে আমরা একই রকম দেখতে,’ বলেন উ জিউপিং।

অবশেষে মিলন নাটকের দিকে গড়ায় পুরো ঘটনাটি। উ জিউপিং ২১ জুন পত্রিকায় লিউ-এর ছবি দেখেন। তার মনে হয়, তিনি তার হারানো বোন হতে পারেন। উ পত্রিকাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে লিউ-এর সঙ্গে দেখা হয় প্রথমবারের মতো। এরপর ২৪ জুন চেন ও লিউ- এর ডিএনএ টেস্ট করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল যেদিন দেয়ার কথা, তার আগের রাতে লিউ একেবারে ঘুমাতে পারেননি বলে জানান। তিনি বলছেন, ‘সারারাত কাটে তার বিছনায় এদিক ওদিক করে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন লিউ ৮ জুলাই। তারা নিশ্চিত হন, চেনেরই সন্তান লিউ। ৩৯ বছর পর অপেক্ষার অবসান ঘটে মা ও মেয়ের।

শেয়ারবাজারনিউজ/মা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.