পয়েন্ট অব নো রিটার্নে বাংলাদেশ পরিস্থিতি
অন্যদিকে, বিরোধী জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আন্দোলনের এ পর্যায়ে ক্ষান্তি দেওয়া বা সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত রাখার বিষয়টি এমনকি তারা চিন্তাও করছেন না। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা জানিয়েছেন, বিরোধী দল এখন যে আন্দোলনে রয়েছে তা কেবল ২০ দলীয় জোটের ক্ষমতায় যাওয়া বা ব্যক্তি বিশেষের মন্ত্রী-এমপি হওয়ার আন্দোলন নয়। এমনকি শুধুমাত্র বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্বের লড়াইও এটি নয়। বাস্তবে এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তথা রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা রক্ষার লড়াই। তিনি বলেন, বর্তমান দখলবাজ সরকারের সঙ্গে অতীতের কোনো সরকারকেই মিলানো যাবে না। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য এই সরকার ‘যত খুশি মানুষ মারা’র নীতি গ্রহণ করেছে এবং নিজেদের এমন অমানবিক অবস্থানের পক্ষে সাফাই গাইতে দেশের সকল গণমাধ্যমকে বাধ্য করা হচ্ছে। এই রকম দস্যু-শাসন মেনে নেওয়ার জন্য তো এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা একটি ভূয়া নির্বাচনের আবরণে রাষ্ট্রটিকে ডাকাতি করে নিয়েছে। তাদের এই ডাকাতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ক্ষান্তি দেওয়া হলে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে অর্থহীন হয়ে পড়বে। সুতরাং এই আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রামের এক সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কোনো আন্দোলনেই এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে জীবন দিতে হয়নি, এত মানুষকে জেলে যেতে হয়নি। সরকারের সর্বাত্মক মারমুখী অবস্থানের মধ্যেও বিরোধীজোট টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি পালন করছে। এত দীর্ঘসময়ের একটি আন্দোলন কখনও স্তিমিত হবে, কখনো আবার জোরালো হবে। কিন্তু যেহেতু এই আন্দোলনের প্রতি দেশের ৭০ ভাগেরও বেশি মানুষের সমর্থন রয়েছে (তাঁর দাবি মতে) সে কারণে বর্তমান সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবেই। তিনি জানান, শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে কিছু ইস্যুতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল এটা ঠিক, তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে সেই সমস্যা ইতিমধ্যেই মিটে গেছে। সুতরাং চলতি সপ্তাহ থেকেই আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে দুই পক্ষের এমন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ অবস্থানের প্রেক্ষিতে অচলাবস্থা নিরসনের উপায় সম্পর্কে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, যে যাই বলুক, বাস্তবে আলোচনা ছাড়া তো সমাধানের কোনো পথ নেই। আমরা বলছি, বিদেশিরাও বলছে। যেভাবেই হোক না কেন, কোনো না কোনোভাবে আলোচনা শুরু হতেই হবে। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবেও এটা শুরু হতে পারে। কিন্তু আলোচনার পথ এড়িয়ে বর্তমান সংকট থেকে কোনোভাবেই বের হওয়া যাবে না। আর বিবদমান পক্ষগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে সবাইকেই কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টেলিফোন আলাপে প্রায় অভিন্ন কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, সংকট বা অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। বিবদমান পক্ষগুলোর সবাইকেই এদেশে থাকতে হবে, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের অস্তিত্বকে মেনে নিতে হবে। তা না হলে এদেশ বসবাসের যোগ্য থাকবে না। তিনি বলেন, দেশে যে অচলাবস্থা চলছে এটা সমাধানের অযোগ্য কোনো সংকট নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকটের অবসান ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, আলোচনা হবে। এ জন্য হয়তো সময় লাগবে। যারা এখন আলোচনায় বসতে সম্পূর্ণরূপে নারাজ, তারাও ভাল করেই জানেন যে, আলোচনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।