আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ মার্চ ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

ভারতকে পেলে জ্বলে ওঠে যে টাইগাররা

Bangladesh Cricketশেয়ারবাজার ডেস্ক: ২০১২ সালের সেই ১৬ মার্চের সজীব স্মৃতির কথা, আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগের ঘটনা। অবশ্য ৩ বছর হলেও এমন সুখময় স্মৃতি ধূসর হওয়ার কথা নয়। সেদিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশ দল উপহার দিয়েছিল এক রূপকথার জয়। ভারতের ২৯০ রান তাড়া করতে নেমে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের একেকটা বাউন্ডারি যেন রক্তে নাচন তুলছিল বাংলাদেশি দর্শকদের।

স্মৃতির ভেলায় চড়ে আরেকটু আগের দিকে ফিরে যাওয়া যাক। ২০০৭ সালের সেই ১৭ মার্চ। বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজার তোপে ভারত অলআউট ১৯১ রানে। ব্যাট হাতে তামিমের সেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারা, সঙ্গে মুশফিকের ঠান্ডা মাথায় ফিনিশিং। ভারতের সাথে বাংলাদেশের আরেকটি কাব্যিক জয়।
তারও আগে ২০০৪ সালের সেই ২৬ ডিসেম্বর। অবশ্য এ তারিখটাকে বিশ্ব জানে ভিন্ন কারণে। ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামিতে সেবার ক্ষতি হলো বেশুমার। ওই দিন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেও ভারতের কাছে ‘সুনামি’ হয়ে উঠলেন মাশরাফি! ‘অলরাউন্ডার’ মাশরাফির কল্যাণে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। ভারতের সাথে ২৮টি ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের জয়ের ঘটনা এ তিনটিই আর একটি ম্যাচ ড্র। প্রথমটি সৌরভ গাঙ্গুলির, দ্বিতীয়টি রাহুল দ্রাবিড়ের আর শেষটি মহেন্দ্র সিং ধোনির বিশ্বজয়ী ভারতের বিপক্ষে। আর এ তিন জয়ের গল্প বলতে গেলে ঘুরেফিরে আসে কয়েকজনের নাম- মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল বাংলাদেশের চার মূর্তি।
২০০৪ সালের সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২০০ পেরিয়েছিল মূলত ‘ব্যাটসম্যান মাশরাফি’র কল্যাণে। ৯ নম্বরে নেমে ৩৯ বলে ৩১ রানে ছিলেন অপরাজিত। দল পেয়েছিল ২২৯ রানের পুঁজি। বল হাতে মাশরাফি শূন্য রানেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বীরেন্দর শেবাগকে। সেই বিপর্যয় আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত। গাঙ্গুলির দল অলআউট ২১৪ রানে। মাশরাফি ৯ ওভার বল করে ৩৬ রানে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। এমন অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হিসেবে মাশরাফিকে বেছে নিতে খুব একটা কষ্ট হয়নি বিচারকদের।
২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে মাশরাফি যেন আরও ভয়ংকর। শুরুতেই ভারতের টপ অর্ডার এলোমেলো করে দিলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’! আবারও মাশরাফির বলে বোল্ড শেবাগ! মাশরাফির সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দ্রাবিড়ের দল। ধুঁকতে থাকা ইনিংসটা থামে ১৯১ রানে। মাশরাফি ৯.৩ ওভারে ৩৮ রানে পেলেন ৪ উইকেট।
ভারতের দেওয়া ১৯২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ আক্রমণ শুরু করেন তরুণ তামিম। সেদিন তামিমের ভূমিকাই ছিল অন্যরকম। বাংলাদেশকে ঝোড়ো সূচনা এনে দিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। এতে তারা ৫ উইকেট হাতে রেখে খুব সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেল।ভারতের জহির-মুনাফদের কীভাবে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন বাঁহাতি এ ওপেনার সে স্মৃতি ভুলার মত না। তামিমের পাশাপাশি মুশফিক ও সাকিবও ফিফটি করে জানিয়ে দিয়েছিলেন নিজেদের আগমনী বার্তা। তবে সেদিন এর ম্যাচসেরা কোনো ব্যাটসম্যান নয়, হলেন দুরন্ত বলার মাশরাফিই।
২০১২ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে ঘটল স্মরণযোগ্য দুটি ঘটনা। রাজ্যের চাপ ফুঁড়ে টেন্ডুলকার পেলেন শততম সেঞ্চুরি। ভারত করল ২৮৯ রান। এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৫ রানেই ওপেনার নাজিমউদ্দিন ফিরে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ লক্ষ্য পেরিয়েছিল সাবলীলভাবেই। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল একসঙ্গে পাঁচ ব্যাটসম্যান জ্বলে ওঠায়। তামিমের ব্যাট থেকে এল ৭০ রানের সময়োপযোগী ইনিংস। ফিফটি পেলেন জহুরুল ইসলাম, নাসির হোসেনও। ফিফটি না পেলেও ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন মুশফিক-সাকিব। মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ২৫ বলে ৪৬ রানে আর সাকিব ফেরেন ৩১ বলে ৪৯ রান করে। টেন্ডুলকারের রেকর্ড সেঞ্চুরির আনন্দ ম্লান হয়ে গেল বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি খুব একটা সহজলভ্য নয়। এ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র দুজন। ২০০৮ সালের জুনে করাচিতে এশিয়া কাপে অলক কাপালি করেছিলেন ১১৫ রান। গত বছর ফতুল্লায় এশিয়া কাপেই অলককে ছাড়িয়ে যান মুশফিক, করেন ১১৭ রান। ভারতের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান। অন্যদিকে ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশের মাত্র একজন বোলার। সেই কৃতিত্ব তাসকিন আহমেদের। গত বছর জুনে নিজের অভিষেকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এ তরুণ পেসার। তাসকিনের তোপে ভারত গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১০৫ রানে। অবশ্য মামুলি এ লক্ষ্যটা পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। জিততে পারেনি কাপালি-মুশফিকর সেঞ্চুরির দিনেও।
যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, তা দলীয় প্রচেষ্টায়। নিয়ম মেনে ম্যাচের মূল নায়ক হিসেবে একজনকে বেছে নিতে হয়েছে। কিন্তু সে সব ম্যাচের পার্শ্বনায়ক ছিলেন অনেকেই। ‘অনেকে’ বলতে ঘুরেফিরে ওই চার-পাঁচজনই।
এবার দেখার বিষয় ১৯ মার্চ মেলবোর্নে কি পুরোনো নায়করাই জ্বলে উঠবেন, নাকি বাংলাদেশ দেখবে নতুন নায়ক!

শেয়ারবাজার/রা

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.